রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন শহরে নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৩৫০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় টঙ্গীর দত্তপাড়ায় তিনটি পর্যায়ে ১০০টি বহুতল ভবনে ১৩৫০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের যে প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী।
গত সোমবার সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ উদ্দেশ্যে গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভা থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) সম্পন্ন হয়েছে।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক গণপূর্তমন্ত্রী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি ও তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি পরিবেশ সুরক্ষা, প্রয়োজনীয় বনায়ন, উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ, খেলার মাঠ, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, সৌরশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, পোড়ামাটির ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহার, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা, সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের সর্বোচ্চ সুযোগ রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।
ওই সভায় মন্ত্রী রাজধানীর করাইল বস্তি ও টিঅ্যান্ডটি কলোনির বস্তিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্ত অধিদফতরকে পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। ৭৫০ বর্গফুট গ্রস আয়তনের এসব ফ্ল্যাটের অভিন্ন ডিজাইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান স্থপতিকে মৌখিক নির্দেশনা দেন বলেও জানা যায়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ১৫তলাবিশিষ্ট ভবনে ২১৪২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৭টি ভবনে ৫৯২২টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ৩৬টি ভবনে ৫৪৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শহরেও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পর্যায়ক্রমে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য ৫৩৩টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে। এসব ফ্ল্যাটে তারা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বসবাস করছে।
উল্লেখ্য, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উত্তরা আবাসন প্রকল্পে (তৃতীয় পর্যায়) নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য ১০ একর জমি নির্দিষ্ট রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই জমিতে নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য মন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নবীরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের উন্নত আবাসন নিশ্চিতের জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। টঙ্গীতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমাদের যে প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রকল্পটির ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সারা দেশে আমরা একই ডিজাইনে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভাড়াভিত্তিক আবাসন তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা ছাড়াও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আমাদের অন্য যেসব উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে, যেমন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের সাথেও এরকম আবাসন প্রকল্প নির্মাণের জন্য আলোচনা করছি। আশা করি প্রয়োজনীয়তা নিরিখে সারা দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ডিজাইন ও ড্রয়িংসহ প্রকল্পের অফিসিয়াল যেসব কাজ আছে তা দ্রুত সম্পাদন করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।