সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত সংস্থার সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম এসেছে বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্তত ১০ কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এসব কর্মকর্তার মধ্যে উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন।
প্রাযুক্তিক তদন্তে এসব কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সাংবিধানিক সংস্থার কর্মকর্তা হওয়ায় প্রশ্ন ফাঁসে তাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নজরদারিতে থাকা কর্মকর্তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য দেশের সব বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে থাকা সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নাম আসা কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি তো অনেক আলোচিত মামলা, গ্রেপ্তারও অনেক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকের নাম আসছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের নাম আসছে, তাদের সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষার আগে ও পরে নাম আসা কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনের যোগাযোগ তালিকা, তারা কোথায় কার কাছে গেছেন, সেসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নজরদারি করা হচ্ছে তাদের বর্তমান গতিবিধি। বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে একটি চক্রের ১৭ জনকে আটক করেছে সিআইডি। গত ৬ ও ৭ জুলাই তাদের রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, মতিঝিল, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খোদ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এসব প্রশ্ন ফাঁস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ১৭ জনকে আটকের পর গত মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন থানায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে একটি মামলা করে সিআইডি। এ মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয় ৬০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওইদিনই গ্রেপ্তার ১৭ জনকে আদালতে তোলা হয়। তাদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলমসহ ১১ জন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পিএসসির তিন কর্মকর্তা ও দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া ছয়জনের জবানবন্দিতে পিএসসির আরও অনেকের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে ১০ কর্মকর্তার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক পলাতক : সিআইডি বলছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত প্রায় ৫০ জন। যদিও ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনকে ইতিমধ্যেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৪ জন পলাতক। পলাতকদের মধ্যে পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়ও একজন। ফোন বন্ধ থাকার কারণে তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানাও যাচ্ছে না। চাকরিতে থাকাকালে সাবেক এই কর্মকর্তা বেশ কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার সময় তিনি ইউনিট-১৩-তে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ১৯ মার্চ। সেদিন তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে ছিলেন।
পলাতক নিখিল চন্দ্র রায়সহ অন্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত এলাকায় সতর্কবার্তা : যারা পলাতক আছেন তারা যেন বিদেশ চলে যেতে না পারেন সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের প্রত্যেকটি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন, সথল ও সীমান্ত এলাকায় তাদের বিষয়ে জানিয়ে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আবেদ আলী পিএসসির কোনো চেয়ারম্যানের গাড়ি চালাতেন না : প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে সৈয়দ আবেদ আলী সব থেকে বেশি সমালোচিত। তাকে নিয়ে সব থেকে বেশি চর্চা হচ্ছে নানা মাধ্যমে। বলা হচ্ছে, তিনি পিএসসির সাবেক তিনজন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন। তবে পিএসসির দাবি, আবেদ আলী কখনোই পিএসসির কোনো চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন না। তিনি চাকরিজীবনে তিনজন সদস্য এবং একজন যুগ্ম সচিবের গাড়িচালক ছিলেন।
পিএসসির প্রশাসন শাখা থেকে বলা হয়েছে, চাকরিজীবনে আবেদ আলী পিএসসির সদস্য মজিবুর রহমান বিশ্বাস, মোজাম্মেল হক ও মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাতের গাড়ি চালিয়েছেন। তবে কোন যুগ্ম সচিবের গাড়ি চালাতেন সেটা জানায়নি প্রশাসনিক শাখা।
পিএসসির ৫ কর্মকর্তার বিষয়ে দুদকে চিঠি : নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছে পিএসসি। গতকাল সন্ধ্যায় পিএসসি থেকে দুদক সচিবের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে সই করেন পিএসসির প্রশাসন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জামিলা শবনম।
অভিযুক্ত পাঁচজন হলেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম মো. আলমগীর কবির ও পিএসসির কর্মচারী ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।
চিঠির বিষয়ে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য আসছে। ফলে এগুলো অধিকতর তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহের জন্য দুদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে পিএসসি। তাদের বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি নাম গোপন করে তথ্য দিতে চায় তারাও পিএসসিতে জানতে পারবে।
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.