ঢাকার ধামরাইয়ের বাটুলিয়া এলাকায় একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের কাছে এটি “আধ্যাত্মিক সাধক” বুচাই পাগলার মাজার নামে পরিচিত।
ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড ও মাদকের ছড়াছড়ির অভিযোগে এনে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ আলেম ওলামারা মাজারটি ভেঙে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে শরিয়া বা সমাজবিরোধী কোনো কাজকর্ম হত না। মাজারে মাদক নিষিদ্ধ ছিল। মাজারের টাকায় একটি মসজিদ পরিচালনা, মাদ্রাসা পরিচালনায় অর্থ দেওয়াসহ অসহায় মানুষদের সহায়তা করা হত। মাজার ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তারা।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাটুলিয়া এলাকায় কালামপুর-সাটুরিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাজারটিতে হামলা চালানো হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর করা হয়।
মাজার ভবনটি খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। বেলা আাটার দিকে াহিনী, উপজেলা প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাজারটির ভবনটির তিনটি দেয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবনের চারপাশে সীমানা দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ছাদে মোট পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে, এরমধ্যে চারটির মধ্যে তিনটি গম্বুজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। মাজারের পাশে থাকা একটি টিনের কক্ষ পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে থাকা সব মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। ভক্তদের বিশ্রামের জন্য তৈরি সেমি-পাকা ভবনে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, বাটুলিয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন “বুচাই পাগলা”। তবে মধ্যে আধ্যাত্মিক গুণ ছিল বিশ্বাস করতেন স্থানীয় অনেকে। এ কারণে ধীরে ধীরে তার ভক্ত অনুসারী তৈরি হয়। আশির দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। এরপর বাটুলিয়ার সড়কের পাশে তাকে দাফন করা হয়। ওই কবরকে ঘিরেই মাজার গড়ে ওঠে। প্রতিবছর সেখানে ওরশ ও মাসব্যাপী মেলা আয়োজন করা হয়। বাউল গানসহ নানা আয়োজন থাকে সে আয়োজনে। দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দিতেন ওরশ ও মেলায়। তবে মুসল্লিদের অভিযোগ, সেখানে ধর্ম ও সমাজবিরোধী কাজকর্ম হয়। এরই জেরে বুধবার সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরেই ধামরাই আলেম ওলামারা মাজারটি গুঁড়িয়ে দিতে আলাপ আলোচনা করছিলেন। এরই জেরে ধামরাইয়ের ইসলামপুর, কালামপুর, কুশুরাসহ আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ইমামরা জড়ো হয়ে মাজারটিতে হামলা করেন।
এ হামলায় অংশ নিয়েছিলেন কুশুরা দক্ষিণ কান্টাহাটি মসজিদের ইমাম মাওলানা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘এখানে শিরক-বেদাতি কাজকর্ম চলছিল। তবে কোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে পারছিলাম না। আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রতিরোধ করার সময় হয়েছে। এখন যদি বসে থাকি, তবে কেয়ামতের ময়দানে হিসাব দিতে হবে। যে কারণে আমরা ধামরাইয়ের আলেম ওলামারা বিভিন্ন সংগঠন থেকে একত্রিত হয়ে এটি বন্ধ করি। ধামরাই ওলামা পরিষদ, ইমাম পরিষদ, কালামপুর আঞ্চলিক ইমাম পরিষদ এখানে ছিল।”
এ হামলার সমন্বয় করেছেন বলে পরিচয় দেওয়া আবুল কাশেম বলেন, ‘‘এখানে অনেক আগে থেকে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড হয়েছে। তবে জনগণ প্রতি করতে পারনি। নে মদ, গাঁজাসহ, নানা অনৈতিক কাজ হত। কালামপুর ও আশপাশের তৌহিদি জনতা সবাই একত্র হয় ও এটি ধ্বংস করে।”
এদিকে এ হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এই মাজারে শরিয়া বিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হত। মাজারে সিজদা না দেওয়ার নির্দেশনা টাঙানো ছিল। মাজারের দানবাক্স সপ্তাহে এক দিন জনসমক্ষে খোলা হত। দানের অর্থে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। সেই মসজিদের ইমামের বেতন দেওয় হত মাজারের অর্থ থেকে। এছাড়া অসহায় দরিদ্রদের আর্থিক সহযোগিতা, মাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তাসহ মানুষের কল্যাণে এই অর্থ ব্যয় করা হত।
স্থানীয়দের ভাষ্য, মাজার নিয়ে কারো আপত্তি থাকলে উপজেলা প্রশাসন কিংবা প্রশাসনের অভিযোগ করতে পারত। এভাবে অতর্কিত ভাঙচুরকে অন্যায় বলে অভিহিত করেছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এলাকার একটা লোকও মাজার ভাঙার সঙ্গে ছিল না। তারা কেউ বুঝতেই পারেনি। এই মাজারে শরিয়া বিরোধী কোনো কাজকর্ম করতে দেইনি আমরা। মাদক সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল। পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষণিক মাজারে নিরাপত্তা দিয়েছে। দূরের লোকজন এসে যেভাবে মাজার ভাঙল এটা অন্যায়। আল্লাহ এর বিচার করবেন।”
স্থানীয় বাসিন্দা তারা মিয়া ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘‘ওরা যেভাবে এসেছে, আমরা বুঝলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতাম। এলাকার কেউই মাজার ভাঙতে দিত না।”
মাজারের পাশেই ভাঙচুর ও গুঁড়িয়ে দেওয়া টিনের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় বাটুলিয়া এলাকার অন্তত অর্ধ শতাধিক বাসিন্দাকে।
মাজারের অর্থে পরিচালিত বাবা বুচাই চান পাগলা জামে মসজিদে গত ১২ বছর যাবত ইমামতি করছেন মাওলানা মো. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, “এই মাজারে শরিয়া বিরোধী কর্মকাণ্ড আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতাম। সিজদা করতে দেওয়া হতো না। মাজারের দানবাক্সের টাকা মানুষের জন্য ব্যয় করা হতো। তারা যেভাবে এটি ভাঙচুর করেছে, এটাই ইসলাম বিরোধী কাজ। এলাকার মানুষ খুবই কষ্ট পেয়েছে।”
সানোড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. তিতুমীর হোসেন বলেন, ‘‘তারা অতর্কিতে এসে ভাংচুর করেছে। ইউএনও স্যারের ফোন পেয়ে দুইজন চৌকিদার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। তবে তাদের সামনে যেতে পারিনি। পরে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ্থিক ষি ে।”
ামরাই উপজেলা সহারী কমিশনার ভূমি প্রশান্ত বৈদ্য বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা এখানে আসেন। তারা কিছু দাবিদাওয়া জানিয়েছেন। তাদের সঙ্গে ইউএনও মহোদয় বৈঠক করবেন। আপাতত তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে