একীভূত হওয়ার পর দুর্বল ব্যাংকে পরিণত হওয়ার পেছনে দায়ীরা পাঁচ বছর পরিচালক হতে পারবেন না। একই সাথে দুর্বল ব্যাংক ও সবল ব্যাংক দুটোরই অডিট ফার্ম দিয়ে ফাংশনাল রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে ফেয়ার ফেইস ভ্যালু বের করা হবে। সবলের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাঠামোর মধ্যে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এক শ্রেণীর ব্যাংক পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কিছু ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। নিজ ব্যাংক থেকে নামে, বেনামে ঋণ নিচ্ছেন, কিন্তু ওই ঋণ আর পরিশোধ করছেন না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুই ব্যাংকের পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু এসব ঋণও আর পরিশোধ করছেন না। অথচ, ব্যাংকের মূলধনের ৯০ শতাংশের মালিক সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীরা। এমনি অবস্থায় তাদেরকে এ পরিস্থিতি উন্নতি করার জন্য আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তাদের অবস্থার পরিবর্তন না হলে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বর্তমান পলিসি অ্যাডভাইজার আবু ফারাহ মো: নাসের গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকের পরিচালক কে হবেন, এটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি চলে। আমরা যখন ব্যাংকগুলোকে মার্জ করবো, তখন দুর্বল ব্যাংক ও সবল ব্যাংক দুটোরই অডিট ফার্ম দিয়ে ফাংশনাল রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে ফেয়ার ফেইস ভ্যালু বের করা হবে। অ্যাসেটের ওপর ভিত্তি করে ডিরেক্টর নির্ধারণ হবেন। তবে আগে যাদের কারণে ব্যাংক দুর্বল হয়েছে, তারা পরবর্তী পাঁচ বছর ব্যাংকের বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন না।’ ওই দিন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইসিএবি) রিক্যালিব্রেশন অব বাসেল আর্কিটেকচার ফর দ্য ব্যাংকস টু প্রমোট ইকোনমিক গ্রোথ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারাহ নাসের বলেন, আমাদের দরকার ভালো ব্যাংক পরিচালনা করা। যদি কোনো ব্যাংক নিজে নিজেই তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কথা নেই। তাদেরকে জোর করে মার্জ করার পরিকল্পনা নেই। ব্যাংকের ডিরেক্টর শেয়ার হোল্ডাররা মাত্র ১০ শতাংশ, ক্যাপিটালের বাকি ৯০ শতাংশ হলো ডিপোজিটরের। সে ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হবে ডিপোজিটরদের স্বার্থ রক্ষার্থে।
তিনি আরো বলেন, একটি ব্যাংক যদি ডিপোজিটরদের মানি উইথড্র করার মাধ্যমে ভেঙে পড়ে, তাহলে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো ১০ থেকে ২০টি ব্যাংক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ডিপোজিটরদের অর্থ সংরক্ষণের জন্য যা যা লাগবে আমরা তাই করব।
প্রসঙ্গত, সবলের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে ইতোমধ্যে যে রোডম্যাপ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, একীভূত হওয়া ব্যাংকের জনবলকে একীভূত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। পাশাপাশি ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ কমানো, সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য যেসব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে তা পূরণের জন্য আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যেসব ব্যাংক তাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারবে না, তাদেরকেই দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে তারা নিজেরা অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবল ব্যাংকের সাথে মিলিয়ে দেয়া হবে।