Dhaka 12:01 am, Monday, 23 December 2024

চার কিশোর খুন করেছে সহপাঠীকে

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল এলাকায় এক পরিত্যক্ত ভবনে ডেকে এনে বন্ধুরা হত্যা করেছে স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের আগে তারা একসঙ্গে ইফতারও করেছিল। নিহত ফারহান জাহি হিমেল (১৫) পিপরুল এলাকার ওমর ফারুকের ছেলে এবং পাটুল হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মুক্তিপণের টাকা আদায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হিমেলের সহপাঠী চার যুবককে। তারা হলো নলডাঙ্গার পিপরুল এলাকায় প্রদীপ সাহার ছেলে সজল সাহা পার্থ (১৮), পাটুল পূর্বপাড়ার সুমন আলীর ছেলে মেহেদী হাসান (১৭), কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী হাঁপানিয়া এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম সুজন (১৮) ও সুজনের সহপাঠী সড়কুতিয়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে শিমুল ইসলাম (১৮)।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ টি এম মাইনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা ও ইফতারির কথা বলে হিমেল বাড়ি থেকে বের হয়। ইফতারের পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজির পর কোনো খবর না পেয়ে থানায় জানান। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনুসন্ধান করে হিমেলের সঙ্গে সর্বশেষ সজলের মোবাইলে যোগাযোগের তথ্য পায়। এর পরপরই পুলিশ সজলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে তার আরেক সহপাঠী মেহেদীকে আটক করে পুলিশ। রাতে গ্রেপ্তার করা হয় শরিফুল ইসলাম সুজনকে। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার সত্যতা স্বীকার করে ও তার হেফাজত থাকা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়। পরে আটকদের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে পরিত্যক্ত ভবন থেকে ভুট্টার পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা ফারহান জাহি হিমেলের রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার দা, রক্তমাখা গামছা, রশি ও পলিথিন, ভিকটিমের ব্যবহৃত একটি বাটন মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহৃত একটি বাইসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মামলার আইও এসআই আরিফুল ইসলাম জানান, নিহতের বাবা ওমর ফারুক ওই ঘটনায় শুক্রবার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। দুপুরে আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আদালতে পাঠানোর পাশাপাশি রিমান্ড আবেদনও করা হয়েছে জানান এসআই আরিফুল ইসলাম।

পুলিশের দাবি, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যেই ওই স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে একপর্যায়ে খুন করা হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি। নিহতের বাবা ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে কেউ কোনো ফোন দেয়নি।’

এদিকে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, হত্যাকারীরা সবাই বখাটে এবং এরা মাদকের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইউপি ভবনের পাশের দোকানি লাবু ও স্থানীয়রা জানান, ঘটনার আগে নিহত ও খুনিদের একসঙ্গে ইফতার করতে দেখেছেন অনেকেই। ইফতারের পর হিমেলকে দিয়ে লাবুর দোকান থেকে সিগারেটও কিনিয়েছে আসামিরা। হত্যাকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

চার কিশোর খুন করেছে সহপাঠীকে

আপলোড সময় : 12:22:30 am, Saturday, 30 March 2024

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল এলাকায় এক পরিত্যক্ত ভবনে ডেকে এনে বন্ধুরা হত্যা করেছে স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের আগে তারা একসঙ্গে ইফতারও করেছিল। নিহত ফারহান জাহি হিমেল (১৫) পিপরুল এলাকার ওমর ফারুকের ছেলে এবং পাটুল হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মুক্তিপণের টাকা আদায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হিমেলের সহপাঠী চার যুবককে। তারা হলো নলডাঙ্গার পিপরুল এলাকায় প্রদীপ সাহার ছেলে সজল সাহা পার্থ (১৮), পাটুল পূর্বপাড়ার সুমন আলীর ছেলে মেহেদী হাসান (১৭), কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী হাঁপানিয়া এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম সুজন (১৮) ও সুজনের সহপাঠী সড়কুতিয়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে শিমুল ইসলাম (১৮)।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ টি এম মাইনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা ও ইফতারির কথা বলে হিমেল বাড়ি থেকে বের হয়। ইফতারের পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজির পর কোনো খবর না পেয়ে থানায় জানান। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনুসন্ধান করে হিমেলের সঙ্গে সর্বশেষ সজলের মোবাইলে যোগাযোগের তথ্য পায়। এর পরপরই পুলিশ সজলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে তার আরেক সহপাঠী মেহেদীকে আটক করে পুলিশ। রাতে গ্রেপ্তার করা হয় শরিফুল ইসলাম সুজনকে। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার সত্যতা স্বীকার করে ও তার হেফাজত থাকা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়। পরে আটকদের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে পরিত্যক্ত ভবন থেকে ভুট্টার পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা ফারহান জাহি হিমেলের রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার দা, রক্তমাখা গামছা, রশি ও পলিথিন, ভিকটিমের ব্যবহৃত একটি বাটন মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহৃত একটি বাইসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মামলার আইও এসআই আরিফুল ইসলাম জানান, নিহতের বাবা ওমর ফারুক ওই ঘটনায় শুক্রবার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। দুপুরে আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আদালতে পাঠানোর পাশাপাশি রিমান্ড আবেদনও করা হয়েছে জানান এসআই আরিফুল ইসলাম।

পুলিশের দাবি, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যেই ওই স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে একপর্যায়ে খুন করা হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি। নিহতের বাবা ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে কেউ কোনো ফোন দেয়নি।’

এদিকে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, হত্যাকারীরা সবাই বখাটে এবং এরা মাদকের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইউপি ভবনের পাশের দোকানি লাবু ও স্থানীয়রা জানান, ঘটনার আগে নিহত ও খুনিদের একসঙ্গে ইফতার করতে দেখেছেন অনেকেই। ইফতারের পর হিমেলকে দিয়ে লাবুর দোকান থেকে সিগারেটও কিনিয়েছে আসামিরা। হত্যাকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।