স্টাফ রির্পোটার : রাজশাহীতে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে আবাসিক হোটেলে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সরিয়ে ফেলার পর সেই আবাসিক হোটেলে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতারা। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর গণকপাড়ায় হোটেল গ্র্যান্ডে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে সাংবাদিকদের কাছে প্রাণশঙ্কার কথা জানিয়ে সমাধানের আকুতি জানিয়েছেন হোটেলটির মালিক।
জানা গেছে, হোটেল গ্র্যান্ডের মালিকের নাম আবুল বাসার সুজন। তিনি রাজশাহীর তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-১ ( গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ অনুসারি। গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর মামলার আসামি হয়ে সুজন চট্টগ্রামে পালিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এরপর থেকে হোটেলটি দেখাশোনা করেন তার ভাতিজা রোকন সরকার।
অভিযোগ উঠে, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে ৮-১০ জন ব্যক্তি নগরীর গণকপাড়া এলাকায় হোটেল গ্র্যান্ডের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা ভেতরে প্রবেশ করে হোটেলটির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ফোন কেড়ে নিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করেন। এসময় হোটেলের মালিকপক্ষের একজন কৌশলে পুলিশকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাতে সক্ষম হন।
হোটেলটির মালিকের ভাতিজা রোকন সরকার বলেছেন, ‘রাসিকের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিলদার চাচার ভাস্ত্যা নাফিউল ওরা কয়েকজন ছেলেপেলে নিয়ে হোটেলে গেছে ৭/৮ জন। যায়্যা কয়েকদিন থেকে এই ১০ লাখ টাকা নিব, ৭ লাখ টাকা নিবে এরকম করছে। হোটেলের ব্যবসা নাই দেখে ম্যানেজার বলেছে, বাবা আমাদের তো ব্যবসা নাই। ব্যাবসা হলে আপনাদেরকে টাকা দিব, আমাদের ব্যবসাটা একটু চইলতে লাইগলে আপনাদেরকে টাকা দিব একথা বলেছে। দিয়া আজকে (মঙ্গলবার) হোটেলে আইস্যা কোনো কথা শুনেনি। ম্যানেজারকে আটকিয়ে রেখেছে। ৭/৮ জন যায়্যা হোটেলের রুমে ভাঙচুর করছে। কাউন্টারে একটু ভাঙচুর করেছে, রুমে আলমারি ছিল, ওই আলমারিগুলা ভাঙচুর করছে। ওই ছাত্রদল, সিটি কলেজে ছাত্রদল করে এই কথা বল্যাছে। শুধু বলল যে, সিটি কলেজে ছাত্রদল করে।’
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ হোটেলটিতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি সংবাদে ‘ছাত্রদল’ উল্লেখ না করার অনুরোধ জানান। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। তবে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুর্তুজা ফামিন ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শেখ আসিফ নাফি। বৃহস্পতিবার হোটেল গ্র্যান্ডেই সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা।
তাদের ভাষ্য, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বা হয়রানির ঘটনার সাথে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত নন। ঘটনার সময় ফামিন ব্যক্তিগত দাওয়াতে নগরীর বহরমপুর ও নাফি জিমে অবস্থান করছিলেন বলেও দাবি করেন তারা। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের উপস্থিতির প্রমাণ মিললে আজীবন রাজনীতি থেকে বিরত থাকবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন।
তবে হোটেলটির মালিকপক্ষ জানিয়েছে, হোটেলে প্রবেশ করে সিসিটিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। পরে তাদের সংরক্ষণে থাকা হার্ডডিস্কও নিয়ে গেছেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। উদ্ভুত ঘটনায় প্রাণশঙ্কার কথা জানিয়েছেন হোটেলের মালিক আবুল বাসার সুজন।
তিনি এক সাংবাদিককে ফোন করে বলেন, ‘কী এক বিপদে পড়েছি; ওপরে আল্লাহ, নিচে আপনারা ওসিলা, আমাকে একটু সহযোগিতা করেন। আমি নিরুপায় হয়ে গেছি, অসহায় হয়ে গেছি। ওরা আসে বিভিন্ন সময়ে, খালি টাকাপয়সা চায়; এই করে, সেই করে।
এ পর্যন্ত কত টাকা চাঁদা দেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে সুজন বলেন, ‘ওভাবে কী হিসাব আছে? ২/৩ লাখ টাকা তো চলেই গেছে ধরেন এভাবে দিতে দিতে। আমাকে ফোন দেয় না, হোটেলে যায়; হোটেলে ম্যানেজার আছে ওখানে যায়্যা বলে, আপনারা ব্যবসা করছেন, আপনারা বহু কামিয়েছেন, ব্যবসা করছেন, আমাদেরকে দিতে হবে। প্রথম যে দিন বলে, কী দিতে হবে? তো হচ্ছে আমাদেরকে টাকা বসতে হবে আমাদের সাথে, এখানে ব্যবসা করেতে হলে আমাদের সাথে বসতে হবে।
সুজন বলেন, ছাত্রদলের নাম করে যারা যায়, বিভিন্ন ছেলেপেলেরা এগুলা করে। দিয়ে তখন পরে বসতে যেয়ে এত লাখ টাকা দিতে হবে, এই করতে হবে সেই করতে হবে। দিয়্যা গণ্ডগোল ধরেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম টাকাপয়সার চাপ দিচ্ছে, এই হলো অবস্থা।
শঙ্কা প্রকাশ করে আবুল বাশার সুজন বলেন, ‘ভয় পাচ্ছি আমি। রোকনকে (ম্যানেজার) ধরেন মাইর্যা দিল। ও তো চলাফেরা করে। ওর গায়ে হাত দিয়্যা দিল বা একটা চাকু মাইর্যা দিল, তখন তো জীবন ফিরে পাব না আমি। এটার একটা সমাধান হোক। হোটেল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে রাত্রি ১২টার দিকে, হিসাব নিকাশ শেষ করে, যাইতে লাইগ্যা একটা চাকু মাইর্যা দিল, তখন ওর জীবন কী আমি আর ফিরে পাব? এজন্য শত্রুতা যেন আর না বাড়ে একটা ব্যবস্থা আপনারা করে দেন।’
এ বিষয়ে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।