Dhaka 10:57 pm, Friday, 20 December 2024
বেকিং নিউজ :
Logo কুমিল্লার দেবিদ্বার বিহার মন্ডল এলাকায় বিএনপি’র কর্মী সভা অনুষ্ঠিত Logo মোহনপুরে এবার দেড় লাখ টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা Logo চৌদ্দগ্রামে ডলবা গ্রাম কমিটি গঠন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo বিচারবিভাগের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুণঃপ্রবর্তনের সুযোগ এসেছে – কুমিল্লায় হাবিব উন নবী সোহেল Logo আবাসিক হোটেল থেকে ৫ তরুণ ও ৩ তরুণী গ্রেফতার  Logo কুমিল্লায় কাপড়ের ব‍্যাগে গাঁজা পাচারকালে আটক দুই নারী Logo ময়মনসিংহ সদরে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট -২০২৪ Logo মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯ নং ওয়ার্ডে দিনব্যাপী ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত Logo কুমিল্লা তিতাস উপজেলায় ৯ নং মজিদপুর ইউনিয়নের বি এন পির নবগঠিত আহবায়ক কমিটি ঘোষণা Logo রাজশাহীতে হিমাগারের ৩৯ টাকার আলু খুচরা বাজারে ৭০ টাকায় বিক্রি

কুষ্টিয়ায় অবৈধ ইটভাটায় যৌথ অভিযান ব্যার্থ মুচলিকা নিয়ে ফিরলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা

কে এম শাহীন রেজা,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি

তিন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, আনছার, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ অন্তত ৬০ জনের একটি সজ্জিত দল যাচ্ছিলেন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে। তবে তাঁরা একটি ইটভাটাতেও পৌছাতে পারেননি তাঁদেরকে পথেই আটকে দিলেন অবৈধ ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। পথে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সাদা কাগজে শুধু ভাটা মালিকদের মুচলেকা নিয়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে প্রশাসনের এই সজ্জিত দলটি। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়নের ভোমররার মোড়ে গত বুধবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অবরোধেরর পর মুচলেকা নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সেখানে কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী ও পাবনা সদর উপজেলা প্রশাসন এবং কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালাতে গিয়ে এমন বাঁধার মুখে ফিরে আসেন।
ফিরে আসা কর্মকর্তরা হলেন-কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল ইসলাম, কুমারখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত, পাবনা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন ও কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুল বাসার। প্রশাসনের কর্তাদের ভাষ্য, পদ্মা নদীর কুলঘেঁষে চরসাদিপুর একটি দুর্গম চরাঞ্চল এলাকা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। নৌকা একমাত্র চলাচলের যানবাহন। সেখানে অন্তত ৩০ টির অধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। শত চেষ্টার পরও মালিক-শ্রমিকদের বাঁধার মুখে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন প্রয়োগ না করেও ফিরে এসেছেন তাঁরা। আগামী বছর মালিকরা অবৈধ ভাটা চালাবেন না, এই মর্মে শুধু মুচলেকা নিয়ে ফিরে আসা হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রস্থের পদ্মা নদীর সাড়ে তিন কিলোমিটারে চর জেগেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সদস্যরা নৌকা যোগে ও পাঁয়ে হেঁটে নদীপাড় হন। পরে তাঁরা ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল যোগে চরসাদিপুর ইউনিয়নরের ভোমররার মোড় এলাকায় পৌছালে নারায়েতকবির দিয়ে ঘোষণা দিয়ে ভাটা মালিক, শ্রমিকসহ কয়েক শত লোক তাঁদের পথ আটকে দেন। সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা প্রশাসনের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের তর্কবিতর্ক হয়।
তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মার কারণে চরসাদিপুর এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি নেই। ফলে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে অংসখ্য অবৈধ ভাটা। ভাটায় পুড়ানো হচ্ছে নদী ও ফসলি জমির মাটি ও কাঠ। ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। সেজন্য অবৈধ ভাটা মালিকদের বাঁধার মুখে ফিরে গেছেন প্রশাসনের কর্তারা। জানা গেছে, পদ্মা নদীর কুলঘেঁষে ২২ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে গঠিত কুমারখালীর চরসাদীপুর ইউনিয়ন। এখানে প্রায় ২৩ হাজার মানুষের বসবাস। তিন ও দুই ফসলি কৃষি জমিতে আইন অমাণ্য করে গড়ে ওঠেছে প্রায় ৩৩ টি অবৈধ ইটভাটা। যার মধ্যে অন্তত ১৯টিতে ব্যবহার হচ্ছে টিনের ড্রাম চিমনি। এছাড়াও ইউনিয়ন ঘেঁষে কুষ্টিয়া সদর ও পাবনা অংশজুড়ে রয়েছে আরো অন্তত ৭ টি ভাটা। যার সব গুলোই অবৈধ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কুমারখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত বলেন, দুর্গোম চরসাদিপুর এলাকায় ৩০টির অধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে অবৈধ ভাটায় অভিযান চালাতে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, আনছার, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্তত ৬০ জনের একটি দল যাচ্ছিলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও ভাটায় পৌছানো যায়নি। তবে ভাটা মালিক ও শ্রমিকরা পথেই অভিযান আটকে দিয়েছেন। সেখানে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাষ্য, আগামী বছর আর অবৈধ ভাটা চলবে না, এই মর্মে ভাটা মালিকদের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা প্রধানকারীদের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, পরবর্তীতে আরো গুছিয়ে সুসজ্জিত ভাবে চরসাদিপুরে অভিযান চালানো হবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, অভিযানের ফিরতি মেসেজ এখনও তাকে জানানো হয়নি। জেনে পরে বিস্তারিত বলবেন তিনি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

কুমিল্লার দেবিদ্বার বিহার মন্ডল এলাকায় বিএনপি’র কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

কুষ্টিয়ায় অবৈধ ইটভাটায় যৌথ অভিযান ব্যার্থ মুচলিকা নিয়ে ফিরলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা

আপলোড সময় : 01:55:03 pm, Thursday, 5 December 2024

কে এম শাহীন রেজা,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি

তিন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, আনছার, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ অন্তত ৬০ জনের একটি সজ্জিত দল যাচ্ছিলেন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে। তবে তাঁরা একটি ইটভাটাতেও পৌছাতে পারেননি তাঁদেরকে পথেই আটকে দিলেন অবৈধ ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। পথে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সাদা কাগজে শুধু ভাটা মালিকদের মুচলেকা নিয়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে প্রশাসনের এই সজ্জিত দলটি। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়নের ভোমররার মোড়ে গত বুধবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অবরোধেরর পর মুচলেকা নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সেখানে কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী ও পাবনা সদর উপজেলা প্রশাসন এবং কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালাতে গিয়ে এমন বাঁধার মুখে ফিরে আসেন।
ফিরে আসা কর্মকর্তরা হলেন-কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল ইসলাম, কুমারখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত, পাবনা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন ও কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুল বাসার। প্রশাসনের কর্তাদের ভাষ্য, পদ্মা নদীর কুলঘেঁষে চরসাদিপুর একটি দুর্গম চরাঞ্চল এলাকা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। নৌকা একমাত্র চলাচলের যানবাহন। সেখানে অন্তত ৩০ টির অধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। শত চেষ্টার পরও মালিক-শ্রমিকদের বাঁধার মুখে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন প্রয়োগ না করেও ফিরে এসেছেন তাঁরা। আগামী বছর মালিকরা অবৈধ ভাটা চালাবেন না, এই মর্মে শুধু মুচলেকা নিয়ে ফিরে আসা হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রস্থের পদ্মা নদীর সাড়ে তিন কিলোমিটারে চর জেগেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সদস্যরা নৌকা যোগে ও পাঁয়ে হেঁটে নদীপাড় হন। পরে তাঁরা ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল যোগে চরসাদিপুর ইউনিয়নরের ভোমররার মোড় এলাকায় পৌছালে নারায়েতকবির দিয়ে ঘোষণা দিয়ে ভাটা মালিক, শ্রমিকসহ কয়েক শত লোক তাঁদের পথ আটকে দেন। সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা প্রশাসনের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের তর্কবিতর্ক হয়।
তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মার কারণে চরসাদিপুর এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি নেই। ফলে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে অংসখ্য অবৈধ ভাটা। ভাটায় পুড়ানো হচ্ছে নদী ও ফসলি জমির মাটি ও কাঠ। ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। সেজন্য অবৈধ ভাটা মালিকদের বাঁধার মুখে ফিরে গেছেন প্রশাসনের কর্তারা। জানা গেছে, পদ্মা নদীর কুলঘেঁষে ২২ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে গঠিত কুমারখালীর চরসাদীপুর ইউনিয়ন। এখানে প্রায় ২৩ হাজার মানুষের বসবাস। তিন ও দুই ফসলি কৃষি জমিতে আইন অমাণ্য করে গড়ে ওঠেছে প্রায় ৩৩ টি অবৈধ ইটভাটা। যার মধ্যে অন্তত ১৯টিতে ব্যবহার হচ্ছে টিনের ড্রাম চিমনি। এছাড়াও ইউনিয়ন ঘেঁষে কুষ্টিয়া সদর ও পাবনা অংশজুড়ে রয়েছে আরো অন্তত ৭ টি ভাটা। যার সব গুলোই অবৈধ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কুমারখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত বলেন, দুর্গোম চরসাদিপুর এলাকায় ৩০টির অধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে অবৈধ ভাটায় অভিযান চালাতে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, আনছার, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্তত ৬০ জনের একটি দল যাচ্ছিলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও ভাটায় পৌছানো যায়নি। তবে ভাটা মালিক ও শ্রমিকরা পথেই অভিযান আটকে দিয়েছেন। সেখানে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাষ্য, আগামী বছর আর অবৈধ ভাটা চলবে না, এই মর্মে ভাটা মালিকদের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা প্রধানকারীদের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, পরবর্তীতে আরো গুছিয়ে সুসজ্জিত ভাবে চরসাদিপুরে অভিযান চালানো হবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, অভিযানের ফিরতি মেসেজ এখনও তাকে জানানো হয়নি। জেনে পরে বিস্তারিত বলবেন তিনি।