নিজস্ব প্রতিবেদক : বিচারের আওতায় এনে এবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজশাহী নগরীর মালোপাড়া এলাকায় ঐতিহাসিক ভুবনমোহন পার্কে দলটির মহানগর শাখার পক্ষ থেকে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। ২৮ অক্টোবর পল্টন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. কেরামত আলী।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দীন মণ্ডলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির এডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল। এ সময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন- মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সিফাত আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুল মোহায়মিন, মহানগর জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অধ্যাপক সারওয়ার জাহান প্রিন্স, মহানগর যুব সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, সহকারী সেক্রেটারি সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। ২৮ অক্টোবর শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এক বর্বরতম নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দিবস। ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদেরকে দেশে আর রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। তাদেরকে রাজনীতি করতে দেওয়ার চেষ্টাকে আমরা ধুলিস্যাৎ করে দেব। বিচারের আওতায় এনে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে জামায়াত নেতারা বলেন, আমরা এখনো তাদের ক্ষমা করিনি। সন্ত্রাসীদের ক্ষমা হবে না। তাদের বিচার হবেই। জামায়াত দেশবাসীকে ইসলামী আদর্শের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করতে চায় বলেও জানান দলটির নেতারা।
সবশেষ প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আওয়ামী লীগ ইসলাম বিদ্বেষী দল, গণতন্ত্র বিরোধী দল। তারা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে, দেশে বাকশাল করে একদলীয় শাসন কায়েম করে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর কালেমা লেপন করে। দুর্নীতি-সন্ত্রাসে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের নেত্রী মক্কায় হজে গিয়ে এ যুগের রাবেয়া বসরি সেজেছিল। এটা ছিল তার ভন্ডামি, জাতির সাথে বেইমানি ও প্রহসন। সেটা প্রমাণ হয়েছে, ক্ষমতায় এসে আসল চেহারা উন্মোচন করে কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে। তাদের ইসলাম পালন ছিল ভন্ডামি।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের স্মৃতিচারণ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ওইদিন আমি সেখানে ছিলাম। পল্টনেই ৬ জন শাহাদাত বরণ করেছিলেন। কত পাষণ্ড ছিল আওয়ামী লীগ? চিৎকার কানে পৌঁছে নাই। লাঠিপেটা করে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। শুধু তাই নয়, লাশের ওপর নৃত্য করেছে। শেখ হাসিনা ছিল হুকুমদাতা মদদদাতা নীল নকশা প্রণয়নকারী।
আওয়ামী লীগের শাসনামলের চারটি গণহত্যার কথা উল্লেখ করে এই জামায়াত নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ মেধাবী দেশপ্রেমিক সেনাদের হত্যা করে। এটি ছিল জঘন্যতম গণহত্যা। এরপর ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ব্যানারে দাড়িয়েছিল তৌহিদি জনতা। সেই রাতে শত শত আলেমকে হত্যা করেছে, লাশ গায়েব করে দিয়েছে। আল্লামা সাঈদীর রায় সাজানো হয়েছিল, জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। রায় শোনার সাথে সাথে সেদিন নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। সেদিন প্রায় ২০০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো ছিল আওয়ামী লীগের বর্বরতার ইতিহাস।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, এই সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী ও বিরোধী মতে বিশ্বাসী আলেম-ওলামা সুধী সমাজ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক- কেউ নির্যাতন থেকে রেহাই পাই নাই। সবচেয়ে নির্যাচিত দল ছিল জামায়াত। রেজস্ট্রেশন বাতিল, প্রতীক কেড়ে নেওয়া হলো, কেন্দ্রের অফিস থেকে সারাদেশের অফিস বন্ধ। মিছিল করা যেত না, কথা বলা যেত না।
তিনি বলেন, শুধু জামায়াত নয়, রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে এই আওয়ামী লীগ। বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আইনের শাসনের পরিবর্তে দুঃসাশন আর ব্যাংক লুটপাট আর শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, রিজার্ভ চুরি দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি এই অপশাসন জাতির ওপর তারা চাপিয়ে দিয়েছে। কারণ তারা নির্বাচিত ছিল না। তিন তিনটি নির্বাচন হয়েছে, ১৪ সাল মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ১৮ সালের নির্বাচন দিনের ভোট রাতে হয়। ২৪ সালে ভাগাভাগির ড্যামি নির্বাচন। আযাদ আরও বলেন, ৩৬ দিনে এক হাজার লোককে আওয়ামী লীগ হত্যা করেছে। আবু সাঈদ রংপুরে বুক পেতে দিয়েছিল গুলির সামনে। সেদিন আন্দোলনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল।
৫ তারিখের বিজয় যেটা অর্জিত হয়েছে, জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, এখনো ষড়যন্ত্র বন্ধ হয় নাই। ষড়যন্ত্র চলছে, স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের পায়তারা হচ্ছে। ঐক্য ধরে না রাখলে এ জাতির ভবিষ্যৎ রয়েছে অন্ধকময়।
সবশেষ হামিদুর রহমান বলেন, জনগনের যে আশা আকাঙ্ক্ষা, বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ, জনগণের ভোটাধিকার মৌলিক অধিকারের বাংলাদেশ তথা সুখী সসমৃদ্ধ শালী শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিজয়ের প্রথম ধাপ আমরা অতিক্রান্ত করেছি ৫ আগস্ট। এর মাধ্যমে প্রতিবিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে। দেশবাসী তা সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। আর দ্বিতীয় ধাপের বিজয় আনতে হবে, সংস্কারের মাধ্যমে বিগত সরকারের আবর্জনা মুছে ফেলে পরিচ্ছন্ন পরিশুদ্ধ একটি বাংলাদেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে আমাদের দ্বিতীয় বিজয়। আর চুড়ান্ত বিজয় হবে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে, ন্যায়বিচার ইনসাফভিত্তিক রোল অফ জাস্টিস যদি বাংলাদেশে কায়েম হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম সেই রোল অফ জাস্টির ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করছে।
সভা শেষে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে সোনাদিঘী জামে মসজিদে আসর নামাজ আদায় করেন জামায়াত নেতারা। এরপর ২৮ অক্টোবরের শহীদসহ দেশজুড়ে সকল শহীদের জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।