পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রুটে নতুন ৮ জোড়া ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রংপুর বিভাগে একটি ট্রেনও নেই।
প্রতি বছরের মতো এবারও বৈষম্যের শিকার রংপুর বিভাগ।
এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে রংপুরবাসীর মধ্যে। এদিকে নতুন ট্রেন না পেলেও ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়েছে। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের ১০ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়ছে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে। ফলে ঈদযাত্রায় নতুন করে ভোগান্তির সঙ্গে বাড়বে শিডিউল বিপর্যয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের লালমনিরহাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট বিভাগ থেকে ১০ জোড়া অর্থাৎ ২০টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় যাতায়াত করে।
এগুলো হচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা, দ্রুতযান, দোলনচাঁপা, করতোয়া এক্সপ্রেস ও বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস।
প্রতিদিন এসব ট্রেনে ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে।
ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রীর সংখ্যা দুই-তিন গুণ পর্যন্ত বাড়ে।
যাত্রীদের চাপ কমাতে বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও বরাদ্দের বেলায় রংপুর বরাবরই উপেক্ষিত।
অথচ রাজধানী ঢাকা থেকে ঈদ করতে ঘরে ফেরা রংপুর বিভাগের মানুষের সংখ্যাই বেশি।
বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশই রংপুর বিভাগের বাসিন্দা।
যারা প্রতি বছর ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার পথে অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। এ কারণে অন্যান্য অঞ্চলের মতো রংপুর বিভাগেও ঈদে নতুন ট্রেন বরাদ্দের দাবি দীর্ঘদিনের।
অন্যদিকে ঈদের আগেই রংপুর বিভাগে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনিরহাট এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো প্রতিদিনই প্রায় ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ছাড়ছে। প্রতিটি রেলস্টেশনে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ট্রেনের আসা-যাওয়ার সঠিক তথ্য না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বিশেষ করে চাকরি কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে যাতায়াত করা মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
রমজানে শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের নামাজ, সেহরি ও ইফতারে সমস্যা হচ্ছে।
রংপুর মহানগরীর খামার এলাকার কামরুল হাসান টিটু বলেন, রংপুর রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে বরাবরই অবহেলিত।
এর সঙ্গে তো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় বিড়ম্বনা লেগেই আছে।
এখনো প্রায়ই রংপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা থাকলেও তা ঢাকার উদ্দেশে ১০-১১টার পর যাত্রা করছে।
বেশ কিছুদিন ধরে ট্রেনের এমন শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। ঈদের আগে এভাবে চলতে থাকলে ঘরমুখো মানুষদের সমস্যায় পড়তে হবে।
কলেজ রোডের চারতলা মোড় এলাকার আফসার আতিক বলেন, ঈদের আগে শিডিউল বিপর্যয়ের সঙ্গে রেল কর্মকর্তাদের স্বার্থ জড়িত থাকে। তারা ইচ্ছে করেই রেলসেবার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত করেন। যাতে সাধারণ মানুষ সড়ক পথে যাতায়াত করে।
ফলে সড়কে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। আর গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দুর্ঘটনায় বাড়ে মানুষের প্রাণহানি।
সাংবাদিক ও সংগঠক এহসানুল হক সুমন বলেন, ঈদযাত্রায় সব বিভাগের মানুষ বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। শুধু রংপুরের বেলায় চিত্রটা ভিন্ন। এখানে নতুন ট্রেন বরাদ্দ থাকে না। ফিটনেসবিহীন বাসে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ঈদে গ্রামে ফেরে মানুষ। কখনো কখনো বড় বড় দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অথচ রংপুরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক রেলসেবাসহ এ অঞ্চলের জন্য বিশেষ ট্রেনের দাবি জানিয়ে আসছে।
বিভাগীয় লেখক পরিষদের সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজী মো. জুননুন বলেন, রংপুর বিভাগ থেকে বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট এলাকায় কাজ করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি আসে।
প্রতি বছর নতুন ট্রেন বরাদ্দ হলেও রংপুর থাকে উপেক্ষিত। এমন বৈষম্য নিরসনে সরকারকে উদ্যোগী হওয়া উচিত।
২৮২ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী রংপুর জেলা হলেও এখানে রেল ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। রংপুর বিভাগ থেকে সারাদেশে ধান, আলু, কয়লা, কঠিন শিলা রপ্তানি হয়।
লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করছে। কিন্তু তাদের যাতায়াতের জন্য কোনো বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ নেই। অবিলম্বে ঈদ উপলক্ষ্যে রংপুরে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দসহ রংপুর-ঢাকা ইন্টারসিটি রেল চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।
রংপুর রেলস্টেশনের সুপার শংকর গাঙ্গুলী বলেন, রংপুর এক্সপ্রেসসহ অন্য ট্রেন কিছুটা দেরিতে ছাড়লেও শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা নেই।
ট্রেন দেরিতে আসা-যাওয়ার কারণ অনেক স্থানে সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। এছাড়া ট্রেনের ক্রসিংয়েও সময় ক্ষেপণ হচ্ছে।