Dhaka 4:57 am, Monday, 23 December 2024

হারিয়ে গেছে শহীদদের নামে নামফলক

রংপুর নগরীর দেওয়ান বাড়ি রোড থেকে মুলাটোল যাওয়ার সড়কটির নাম শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণি।
এই সড়কটির নামফলক এখনো টিকে আছে। সেটিরও বেহাল দশা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের নামে রংপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়কের নামকরণ করা হয় ৩৮ বছর আগে। তৎকালীন পৌরসভার পক্ষ থেকে নামকরণের নামফলকও লাগানো হয় সড়কের দুই পাশে।
সেই নামফলকের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। বেশির ভাগ মানুষ জানেনও না যে বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রগতিশীল সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের পক্ষ থেকে বহুবার দাবি জানানো হয়েছে, নামফলকগুলো পুনঃস্থাপন করার কিন্তু আজও তা হয়নি।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায় রংপুরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আফজালের আমলে ১৯৮৪-৮৫ সালে রেজল্যুশনের মাধ্যমে সড়কগুলোর নামকরণ করা হয়।

সে সময় বিভিন্ন সড়কের মোড়ে নামফলক লেখা ছিল।
কিন্তু কালের আবর্তে সেসব নামফলক নষ্ট হয়ে যায়। এখন সেসব নামফলকের অস্তিত্ব নেই।
মোহাম্মদ আফজাল এখন বয়সের ভারে ন্যূব্জ। বললেন,আমার আমলে মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের বীর শহীদদের নামে কিছু রাস্তার নামকরণের উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ইতিহাস জানতে পারে।

রংপুর নগরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কমপক্ষে ১২টি সড়কের নামকরণ করার তথ্য পাওয়া গেছে। জিলা স্কুল মোড় থেকে সিটি বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কটি জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জররেজ সরণি, সিটি বাজার থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত সড়কটি শহীদ খন্দকার মুখতার ইলাহীর নামে নামকরণ করা হয়।
নগরের প্রধান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেতপট্টি সড়কের নামকরণ করা হয় শহীদ ওমর আলী সরণি, সেন্ট্রাল রোডটি শহীদ মোবারক সরণি, গোমস্তাপাড়া থেকে পালপাড়া সড়কটি শহীদ রনি রহমান সরণি, দেওয়ান বাড়ি রোড থেকে মুলাটোল যাওয়ার সড়কটি নাম শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণি, বেতপট্টি থেকে সেনপাড়ামুখি সড়কটি শহীদ ভিকু চৌধুরী সরণি, স্টেশন রোড থেকে দরদী সিনেমা হলের বিপরীত দিয়ে আজিজ নগর কলোনির ভেতরের মূল সড়কটির নামকরণ করা হয় শহীদ মর্তুজা সরণি, কলেজ রোডের মুরগি খামার মোড় থেকে পীরপুর অভিমুখী সড়কের নাম শহীদ ইসমাইল হোসেন বসু মিয়া সরণি, নগরের হনুমান তলায় একটি সড়কের নাম শহীদ রাজ্জাক সরণি, মুন্সিপাড়া কেরামতিয়া স্কুল মোড় থেকে বাস টার্মিনাল যাওয়ার সড়কটি শহীদ মিলি চৌধুরী সরণি নামকরণ করা হয়।
আমার আমলে মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের বীর শহীদদের নামে কিছু রাস্তার নামকরণের উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ইতিহাস জানতে পারে।

মোহাম্মদ আফজাল, রংপুরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান।
মুন্সিপাড়ায় শহীদ মিলি চৌধুরী সড়কেই এই শহীদের পরিবারের সদস্যরা থাকেন।
সেখানে আছেন শহীদ মিলির ছোটভাই কাজী মোহাম্মদ জুননুন পৌরসভার সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েক বছর আমরা নিজেদের উদ্যোগে আমার বোনের নামফলক যত্ন করে রেখেছিলাম।
কিন্তু সড়ক সংস্কারের সময় এটি নষ্ট হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন না করলে নামফলক নতুন করে বানিয়ে লাগানোর উদ্যাগ নেব।
নগরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় নামফলকের চিহ্ন নেই।
তবে একটি স্থান দেওয়ান বাড়ি রোড থেকে মুলাটোল যাওয়ার শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণির নামফলকের অস্তিত্ব এখনো আছে।
তবে সেটিরও বিধ্বস্ত দশা। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি কোনো নামফলক।
সিটি করপোরেশনের কাছে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার কথা বলেছেন রংপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সদরুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় দাবি জানানো হলেও সড়কের নামফলক পুনঃস্থাপন হয়নি।
জানতে চাইলে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সড়কগুলোর সংস্কার চলায় নামফলক নষ্ট হয়ে যায়। খুব শিগগির এর বাস্তবায়ন করা হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

হারিয়ে গেছে শহীদদের নামে নামফলক

আপলোড সময় : 08:19:54 pm, Wednesday, 27 March 2024

রংপুর নগরীর দেওয়ান বাড়ি রোড থেকে মুলাটোল যাওয়ার সড়কটির নাম শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণি।
এই সড়কটির নামফলক এখনো টিকে আছে। সেটিরও বেহাল দশা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের নামে রংপুর শহরের বেশ কয়েকটি সড়কের নামকরণ করা হয় ৩৮ বছর আগে। তৎকালীন পৌরসভার পক্ষ থেকে নামকরণের নামফলকও লাগানো হয় সড়কের দুই পাশে।
সেই নামফলকের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। বেশির ভাগ মানুষ জানেনও না যে বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রগতিশীল সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের পক্ষ থেকে বহুবার দাবি জানানো হয়েছে, নামফলকগুলো পুনঃস্থাপন করার কিন্তু আজও তা হয়নি।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায় রংপুরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আফজালের আমলে ১৯৮৪-৮৫ সালে রেজল্যুশনের মাধ্যমে সড়কগুলোর নামকরণ করা হয়।

সে সময় বিভিন্ন সড়কের মোড়ে নামফলক লেখা ছিল।
কিন্তু কালের আবর্তে সেসব নামফলক নষ্ট হয়ে যায়। এখন সেসব নামফলকের অস্তিত্ব নেই।
মোহাম্মদ আফজাল এখন বয়সের ভারে ন্যূব্জ। বললেন,আমার আমলে মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের বীর শহীদদের নামে কিছু রাস্তার নামকরণের উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ইতিহাস জানতে পারে।

রংপুর নগরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কমপক্ষে ১২টি সড়কের নামকরণ করার তথ্য পাওয়া গেছে। জিলা স্কুল মোড় থেকে সিটি বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কটি জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জররেজ সরণি, সিটি বাজার থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত সড়কটি শহীদ খন্দকার মুখতার ইলাহীর নামে নামকরণ করা হয়।
নগরের প্রধান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেতপট্টি সড়কের নামকরণ করা হয় শহীদ ওমর আলী সরণি, সেন্ট্রাল রোডটি শহীদ মোবারক সরণি, গোমস্তাপাড়া থেকে পালপাড়া সড়কটি শহীদ রনি রহমান সরণি, দেওয়ান বাড়ি রোড থেকে মুলাটোল যাওয়ার সড়কটি নাম শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণি, বেতপট্টি থেকে সেনপাড়ামুখি সড়কটি শহীদ ভিকু চৌধুরী সরণি, স্টেশন রোড থেকে দরদী সিনেমা হলের বিপরীত দিয়ে আজিজ নগর কলোনির ভেতরের মূল সড়কটির নামকরণ করা হয় শহীদ মর্তুজা সরণি, কলেজ রোডের মুরগি খামার মোড় থেকে পীরপুর অভিমুখী সড়কের নাম শহীদ ইসমাইল হোসেন বসু মিয়া সরণি, নগরের হনুমান তলায় একটি সড়কের নাম শহীদ রাজ্জাক সরণি, মুন্সিপাড়া কেরামতিয়া স্কুল মোড় থেকে বাস টার্মিনাল যাওয়ার সড়কটি শহীদ মিলি চৌধুরী সরণি নামকরণ করা হয়।
আমার আমলে মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের বীর শহীদদের নামে কিছু রাস্তার নামকরণের উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ইতিহাস জানতে পারে।

মোহাম্মদ আফজাল, রংপুরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান।
মুন্সিপাড়ায় শহীদ মিলি চৌধুরী সড়কেই এই শহীদের পরিবারের সদস্যরা থাকেন।
সেখানে আছেন শহীদ মিলির ছোটভাই কাজী মোহাম্মদ জুননুন পৌরসভার সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েক বছর আমরা নিজেদের উদ্যোগে আমার বোনের নামফলক যত্ন করে রেখেছিলাম।
কিন্তু সড়ক সংস্কারের সময় এটি নষ্ট হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন না করলে নামফলক নতুন করে বানিয়ে লাগানোর উদ্যাগ নেব।
নগরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় নামফলকের চিহ্ন নেই।
তবে একটি স্থান দেওয়ান বাড়ি রোড থেকে মুলাটোল যাওয়ার শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণির নামফলকের অস্তিত্ব এখনো আছে।
তবে সেটিরও বিধ্বস্ত দশা। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি কোনো নামফলক।
সিটি করপোরেশনের কাছে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার কথা বলেছেন রংপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সদরুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় দাবি জানানো হলেও সড়কের নামফলক পুনঃস্থাপন হয়নি।
জানতে চাইলে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সড়কগুলোর সংস্কার চলায় নামফলক নষ্ট হয়ে যায়। খুব শিগগির এর বাস্তবায়ন করা হবে।