একজন গ্রাহক যে চাপে গ্যাস পাচ্ছেন, সেই চাপ অনুযায়ী তার গ্যাস বিল প্রস্তুত করার জন্য স্থাপন করা হয় ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টর (ইভিসি) মিটার। শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে ইভিসি মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে গত ১০ বছরে দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্রাহক এ মিটার পাননি। ফলে দ্রুত শিল্পে ইভিসি মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এ জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ৩২ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, সারাদেশে ৩ হাজার ২৩৩ গ্রাহক ইভিসি মিটার পেয়েছেন। অথচ বিতরণ কোম্পানি ভেদে ইভিসি মিটার পাওয়ার মতো গ্রাহক রয়েছে সারাদেশে ৯ হাজার ৯৫২টি। দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবার এই মিটার স্থাপনে তোড়জোড় শুরু করেছে।
দীর্ঘ দিন ধরে শিল্পমালিকরা ইভিসি মিটার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে নানা জটিলতায় এ মিটার দিতে দেরি হচ্ছিল। কোনো গ্রাহকের বকেয়া বিল থাকলে তাকে ইভিসি মিটার দেওয়া হতো না। তবে এখন বিল বকেয়া থাকলেও ইভিসি মিটার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিতাসের মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এমডির দপ্তর থেকে ৩২ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিএনজি গ্রাহকদের বকেয়া বিলের
তথ্য হালনাগাদকরণ, আদায়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তিতাসের ডেডিকেটেড লাইনগুলো চেক করে রিপোর্ট করা, যেখানে থার্ড পার্টি কর্তৃক তিতাসের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের তালিকা প্রণনয় করা, এলাকাভিত্তিক মিটার গ্রাহকদের বকেয়া আদায়, প্রয়োজনে মামলার তথ্যাদি সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেওয়া, আবাসিক এলাকার পাইপলাইন পরিবর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা, বড় বড় শিল্প গ্রাহকদের কাছে তিতাসের পাওনা বা বকেয়া থাকলে সেগুলো আদায়ে উদ্যোগ নেওয়া, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফিন্যান্সিয়াল কনসালট্যান্ট নিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রমের আপটেড তথ্য জমা দেওয়া, বিশেষ করে কোনো শিল্পকারখানায় অনিয়ম থাকলে দ্রুত সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা। এ ছাড়া তিতাসের আওতাধীন রাজধানীসহ এর আশপাশের কয়েকটি এলাকায় পাইপলাইন ও সংযোগ প্রদানসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লা আমাদের সময়কে বলেন, তিতাসের গ্যাস বিতরণ এলাকা অনেক বড়। কোম্পানির কার্যক্রমও ব্যাপক। তবে সীমিত লোকবল। ফলে প্রতিনিয়ত নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই লোকবলকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে কোম্পানির উন্নয়নের চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, তিতাস গ্যাস প্রতিনিয়ত আধুনিকায়ন হওয়ার চেষ্টা করছে। সব কার্যক্রমে ডিজিটাল ভার্সনে যুক্ত করতে হচ্ছে। ফলে নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে কোম্পানির নানা দিক চিহ্নিত করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তথ্যের ওপর নির্ভর করে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। চেষ্টা করা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে তিতাতে একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে।
হিসাব অনুযায়ী গত বছর জুন পর্যন্ত ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আওতায় মোট তিন হাজার ২৩৩টি গ্রাহকের ইভিসিযুক্ত মিটার স্থাপন হয়েছে। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (টিজিটিডিসিএল) ২ হাজার ৪৩৩টি, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (বিজিডিসিএল) ১৯৭টি, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (কেজিডিসিএল) ৪০৮টি, জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (জেজিটিডিএসএল) ৯০টি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (পিজিসিএল) ৯৫টি এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি (এসজিসিএল) ১০টি ইভিসি মিটার স্থাপন করেছে। যার মধ্যে তিতাসের এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ৭ হাজার ৫৮০, পশ্চিমাঞ্চলের ২১৭, বাখরাবাদের ৩৬৮, কর্ণফুলীর ১ হাজার ৪৬২, জালালাবাদের ৩১৬টি এবং সুন্দরবনের ১০টি।