Dhaka 11:45 pm, Monday, 30 December 2024

মনোনয়ন বৈধ সব প্রার্থীর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে ৫০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সোমবার নির্বাচন ভবনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এসব আসনে একজন করে প্রার্থী থাকায় ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না।
তাদের জয়ী ঘোষণার ক্ষেত্রে শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হচ্ছে। এর পরদিনই এই ৫০ প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি আওয়ামী লীগ এবং ২টি জাতীয় পার্টি পেয়েছে। দল দুটির মনোনীত প্রার্থীরা রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করেন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই সময়ে বেশির ভাগ প্রার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

যাচাইয়ে ওয়াসা, ডেসকোসহ বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই সিআইবি প্রতিবেদন ইসিতে পাঠায়। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রত্যেক প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তাদের কেউ ঋণ ও বিলখেলাপি কি না, তা সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চান। তারা ‘না-সূচক’ জবাব দিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের বৈধ হিসাবে ঘোষণা করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যাচাই-বাছাই বৈধ হওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আপিলের সুযোগ রয়েছে। যদি আপিল জমা পড়ে, তাহলে সেটি ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেহেতু আসন সংখ্যার বেশি প্রার্থী নেই, সেহেতু এ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ বা ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ সংসদ-সদস্যের হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুপাতিক হারে পেয়েছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। আর ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের সঙ্গে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দিয়েছে। এ হিসাবে আওয়ামী লীগ এবার পাচ্ছে ৪৮টি সংরক্ষিত আসন।

বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ দুটি আসনের একটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তিনি ঢাকা-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য। আরেকজন হচ্ছেন মোছা. নুরুন নাহার বেগম। এবারের নির্বাচনে তিনি ঠাকুরগাঁও-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হচ্ছেন যারা : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ৪৮ জন সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন প্রথমবার সংসদ-সদস্য হচ্ছেন। তারা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা ও কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা। শাম্মী আহমেদ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে দলের টিকিট পেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব ত্যাগ করে আসেন। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়ে প্রার্থী হতে পারেননি।

এর বাইরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান টানা তিনবার সংসদ-সদস্য হতে যাচ্ছেন। কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। লাইলী নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি এর আগেও সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন।
কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য সানজিদা খানম ঢাকা-৪ আসনে দলের মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি নবম সংসদে এ আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। দশম সংসদে ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য। এবার আবারও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হতে যাচ্ছেন।

টানা চতুর্থবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ-সদস্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। গত তিন সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। দ্বাদশ নির্বাচনে ওই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেন তিনি।

এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি গত তিন সংসদে গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এবার তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হচ্ছেন।

এর বাইরে টানা দ্বিতীয়বার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্ত এবং টাঙ্গাইল-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের মেয়ে অপরাজিতা হক। তাদের দুজনেরই রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য। শহিদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রমের মেয়ে নাহিদ ইজাহার খান, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের স্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা খানম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা লীগের সভাপতি শাহিদা তারেখ দীপ্তি, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার আবারও সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দ্রোপদী দেবী আগরওয়ালা, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরুল ইসলামের স্ত্রী এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজিয়া ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলামের মেয়ে, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী আশিকা সুলতানা, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং নারী উদ্যোক্তা জারা জাবিন মাহবুব। জারা জাবিন মাহবুবের পিতা কাইয়ুম রেজা চৌধুরী চাঁপাইনবাগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন। তার চাচা সাবেক প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী।

খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ ইকবাল বিথারের স্ত্রী রুনু রেজা, বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মীর সাখাওয়াত আলী দারুর স্ত্রী ও বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আক্তার বানু, সাবেক সংসদ-সদস্য ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ফরজানা সুমি, লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোখলেছুর রহমানের মেয়ে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক বাহার উদ্দিন খেলনের স্ত্রী খালেদা বাহার বিউটি, সাবেক সংসদ-সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হাবিবুর রহমানের মেয়ে নাজনীন নাহার রশিদ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছাত্তারের মেয়ে ব্যারিস্টার উম্মে ফারজানা সাত্তার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, নারী উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী নাদিয়া বিনতে আমিন, শহিদ মুজিবর রহমানের (আক্কেলপুরী) সন্তান, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজা সুলতানা মলি, পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক সদস্য শহিদ স ম আলাউদ্দিনের কন্যা এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের মেয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেদৌরা আহমেদ সালাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পারুল আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেরা বেগমও সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন।

একইভাবে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রয়াত পৌর মেয়র প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা হাসিবুল হাসান লাবলুর স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা হাসান, বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী ও গবেষক অনিমা মুক্তি গোমেজ, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শেখ আনার কলি পুতুল, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মাসুদা সিদ্দীক রোজি, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাছিনা বারী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিয়ানীবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুমা চক্রবর্তী সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি আশ্রাফুন নেছা, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের কন্যা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ইউসুফ সিকদারের স্ত্রী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, রাঙামাটি সদর উপজেলার ১ নম্বর জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা, রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাছিমা জামান ববিও নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কানন আরা বেগমও সংসদ-সদস্য হয়ে জাতীয় সংসদে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।

ট্যাগস :

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

মনোনয়ন বৈধ সব প্রার্থীর

আপলোড সময় : 02:17:44 pm, Wednesday, 21 February 2024

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে ৫০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সোমবার নির্বাচন ভবনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এসব আসনে একজন করে প্রার্থী থাকায় ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না।
তাদের জয়ী ঘোষণার ক্ষেত্রে শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হচ্ছে। এর পরদিনই এই ৫০ প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি আওয়ামী লীগ এবং ২টি জাতীয় পার্টি পেয়েছে। দল দুটির মনোনীত প্রার্থীরা রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করেন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই সময়ে বেশির ভাগ প্রার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

যাচাইয়ে ওয়াসা, ডেসকোসহ বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই সিআইবি প্রতিবেদন ইসিতে পাঠায়। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রত্যেক প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তাদের কেউ ঋণ ও বিলখেলাপি কি না, তা সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চান। তারা ‘না-সূচক’ জবাব দিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের বৈধ হিসাবে ঘোষণা করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যাচাই-বাছাই বৈধ হওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আপিলের সুযোগ রয়েছে। যদি আপিল জমা পড়ে, তাহলে সেটি ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেহেতু আসন সংখ্যার বেশি প্রার্থী নেই, সেহেতু এ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ বা ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ সংসদ-সদস্যের হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুপাতিক হারে পেয়েছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। আর ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের সঙ্গে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দিয়েছে। এ হিসাবে আওয়ামী লীগ এবার পাচ্ছে ৪৮টি সংরক্ষিত আসন।

বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ দুটি আসনের একটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তিনি ঢাকা-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য। আরেকজন হচ্ছেন মোছা. নুরুন নাহার বেগম। এবারের নির্বাচনে তিনি ঠাকুরগাঁও-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হচ্ছেন যারা : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ৪৮ জন সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন প্রথমবার সংসদ-সদস্য হচ্ছেন। তারা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা ও কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা। শাম্মী আহমেদ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে দলের টিকিট পেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব ত্যাগ করে আসেন। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়ে প্রার্থী হতে পারেননি।

এর বাইরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান টানা তিনবার সংসদ-সদস্য হতে যাচ্ছেন। কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। লাইলী নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি এর আগেও সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন।
কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য সানজিদা খানম ঢাকা-৪ আসনে দলের মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি নবম সংসদে এ আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। দশম সংসদে ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য। এবার আবারও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হতে যাচ্ছেন।

টানা চতুর্থবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ-সদস্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। গত তিন সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। দ্বাদশ নির্বাচনে ওই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেন তিনি।

এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি গত তিন সংসদে গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এবার তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য হচ্ছেন।

এর বাইরে টানা দ্বিতীয়বার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্ত এবং টাঙ্গাইল-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের মেয়ে অপরাজিতা হক। তাদের দুজনেরই রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য। শহিদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রমের মেয়ে নাহিদ ইজাহার খান, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের স্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা খানম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা লীগের সভাপতি শাহিদা তারেখ দীপ্তি, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার আবারও সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দ্রোপদী দেবী আগরওয়ালা, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরুল ইসলামের স্ত্রী এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজিয়া ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলামের মেয়ে, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী আশিকা সুলতানা, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং নারী উদ্যোক্তা জারা জাবিন মাহবুব। জারা জাবিন মাহবুবের পিতা কাইয়ুম রেজা চৌধুরী চাঁপাইনবাগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন। তার চাচা সাবেক প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী।

খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ ইকবাল বিথারের স্ত্রী রুনু রেজা, বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মীর সাখাওয়াত আলী দারুর স্ত্রী ও বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আক্তার বানু, সাবেক সংসদ-সদস্য ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ফরজানা সুমি, লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোখলেছুর রহমানের মেয়ে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক বাহার উদ্দিন খেলনের স্ত্রী খালেদা বাহার বিউটি, সাবেক সংসদ-সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হাবিবুর রহমানের মেয়ে নাজনীন নাহার রশিদ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছাত্তারের মেয়ে ব্যারিস্টার উম্মে ফারজানা সাত্তার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, নারী উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী নাদিয়া বিনতে আমিন, শহিদ মুজিবর রহমানের (আক্কেলপুরী) সন্তান, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজা সুলতানা মলি, পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক সদস্য শহিদ স ম আলাউদ্দিনের কন্যা এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের মেয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেদৌরা আহমেদ সালাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পারুল আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেরা বেগমও সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন।

একইভাবে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রয়াত পৌর মেয়র প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা হাসিবুল হাসান লাবলুর স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা হাসান, বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী ও গবেষক অনিমা মুক্তি গোমেজ, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শেখ আনার কলি পুতুল, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মাসুদা সিদ্দীক রোজি, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাছিনা বারী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিয়ানীবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুমা চক্রবর্তী সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি আশ্রাফুন নেছা, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুনের কন্যা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ইউসুফ সিকদারের স্ত্রী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ, রাঙামাটি সদর উপজেলার ১ নম্বর জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা, রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাছিমা জামান ববিও নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কানন আরা বেগমও সংসদ-সদস্য হয়ে জাতীয় সংসদে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন।