Dhaka 9:43 pm, Monday, 23 December 2024

ভোজন রসিক রাজশাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হকের অনিয়ম

ভোজন রসিক রাজশাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক। লুটপাটের টাকায় স্কুলে পিকনিক করতেন। একদিকে স্কুলের প্রতি অমনোযোগী অন্যদিকে আওয়ামী নেতার ছত্রছায়ায় অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়েই দিন কাটাতেন রসিকতায়। স্কুলে ফলিয়েছেন অনিয়মের বীজ। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে দাবি করতেন ল্যাপটপ অথবা পিকনিকের চাঁদা।

স্থানীয়দের এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধানে উঠে আসে সুবিধা ভোগের লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষকের লেজুড়বৃত্তিক কর্মকান্ড।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টির সভাপতি ছিলেন মো. আমিনুল ইসলাম আজাহার। যিনি ১১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি কমিটির সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে বিদ্যালয়ের বিশাল পুকুরটি টেন্ডার ছাড়াই একদম অল্প টাকায় লিজ নিয়ে কুকুরটি চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিদ্যমান।

২০১৪ সালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। গদান করর পর থেকেই তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে বিদ্যালয়টির লেখা-পড়ার মান অত্যান্ত খারাপ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী কর্মীদের তালে তাল মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাজেহাল করেছেন বলেও জানান অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর যোগদানের সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন ছিল। ক্লাস ঠিক মতো না হওয়,যখন তখন ছুটি দেওয়া এবং বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থী কমতে কমতে এখন ২০০ জনে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতির জন্য এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের কর্মকাণ্ডকে দায়ি করেন।

অন্যায় কর্মকাণ্ড বা অভিযোগগুলো হলো: বিগত কয়েক বছর যাবৎ এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষায় কিছু শিক্ষার্থীকে ফেল দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ফরম পূরন করতে বাধ্য করা হয়।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়মিত থাকেন না। তিনি সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ব্যক্তিগত কাজে প্রায় স্কুলের বাইরে থাকেন। অভিভাবকরা প্রত্যায়নপত্র বা যে কোনো অফিসিয়াল কাজে আসলে প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়না।

এছাড়াও অভিযোগ আছে,আসন্ন ৫ নং রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এবং সর্বস্তরের জনগণের দোয়া ও সমর্থনে নির্বাচনের জন্য বেশিরভাগ সময় স্কুলের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছিলেন তিনি। যদিও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছিলেন এই প্রধান শিক্ষক একরামুল হক।

এনটিআরসি এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত এক শিক্ষিকার কাছ থেকে যোগদানের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক একটি ল্যাপটপ অথবা পিকনিকের জন্য টাকা দাবি করেন বলেও জানা গেছে। যদিও ল্যাপটপ চাওয়ার বিষয়টি সেই শিক্ষিকা শিকার করলেও তিনি বলেন আমাকে কোন চাপ দেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন শিক্ষক একসাথে যোগদানের সময় টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন আমাদের স্কুল “কমিটি” চালায়। তাই কমিটিকে কিছু টাকা দিতে হবে খুশি করার জন্য। কিন্ু তারা কথায় কোন টাকা দেয়নি তারা।

এক শিক্ষার্থী বলেন,প্রধান শিক্ষক স্কুলের দশম শ্রেণীতে গণিত ক্লাস নেয়। কিন্তু স্যার নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না। সেইজন্য ক্লাসের ছাত্রদের গণিত রেজাল্ট খুবই খারাপ। এছাড়া কয়েকদিন আগে ১০ম শ্রেণির এক ছাত্র পড়া বুঝতে চাওয়ায় ক্লাসে চুল ধরে অপমান করার ঘটনাও ঘটেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১০ম শ্রেণিতে মাত্র দু’জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন একজন শিক্ষিকা।

শিক্ষার্থীরা জানায়,দূর্নীতি দমন কমিশন থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে “সততা স্টোর” চালু রাখার কথা থাকলেও সেই টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করে ফেলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা সততা স্টোর দেখতে চাইলে,শিক্ষকদের চা তৈরির রুমে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকটি মরিচাধরা ব্যবহৃত জ্যামিতি বক্স দেখান স্কুলের একজন কর্মচারী।

অভিযোগে গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের মধ্যে একটি বিদ্যালয়ের ভেন্যু। শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ট্রেনিং এর ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু ভেন্যু বাবদ কোনো টাকা বিদ্যালয়ে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক একাই ভোগ করেন। তাছাড়া ট্রেনিং চলাকালীন সময় প্রায় ১০০/১২৫ জন প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের রান্না করে খাওয়ান। মাঝে মাঝেই স্কুল চলাকালীন সময় শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে পিকনিক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যার কারণে প্রধান শিক্ষক সহ সকল কর্মচারী সেই রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকায় পড়া-লেখার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে। বর্তমানে আশেপাশের লোকজন তাকে বাবুর্চি হেড মাষ্টার উপাধী দিয়েছে।

অভিযোগগুলো সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক জানান,তিনি নিজের সম্মান রক্ষার্থে আওয়ামী নেতার সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছুই করেছেন। তবে,এতে কারও কোন ক্ষতি করেননি।

বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন অভিভাবক,প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

ভোজন রসিক রাজশাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হকের অনিয়ম

আপলোড সময় : 02:17:26 pm, Thursday, 5 September 2024

ভোজন রসিক রাজশাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক। লুটপাটের টাকায় স্কুলে পিকনিক করতেন। একদিকে স্কুলের প্রতি অমনোযোগী অন্যদিকে আওয়ামী নেতার ছত্রছায়ায় অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়েই দিন কাটাতেন রসিকতায়। স্কুলে ফলিয়েছেন অনিয়মের বীজ। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে দাবি করতেন ল্যাপটপ অথবা পিকনিকের চাঁদা।

স্থানীয়দের এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধানে উঠে আসে সুবিধা ভোগের লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষকের লেজুড়বৃত্তিক কর্মকান্ড।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টির সভাপতি ছিলেন মো. আমিনুল ইসলাম আজাহার। যিনি ১১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি কমিটির সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে বিদ্যালয়ের বিশাল পুকুরটি টেন্ডার ছাড়াই একদম অল্প টাকায় লিজ নিয়ে কুকুরটি চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিদ্যমান।

২০১৪ সালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। গদান করর পর থেকেই তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে বিদ্যালয়টির লেখা-পড়ার মান অত্যান্ত খারাপ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী কর্মীদের তালে তাল মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাজেহাল করেছেন বলেও জানান অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর যোগদানের সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন ছিল। ক্লাস ঠিক মতো না হওয়,যখন তখন ছুটি দেওয়া এবং বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থী কমতে কমতে এখন ২০০ জনে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতির জন্য এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের কর্মকাণ্ডকে দায়ি করেন।

অন্যায় কর্মকাণ্ড বা অভিযোগগুলো হলো: বিগত কয়েক বছর যাবৎ এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষায় কিছু শিক্ষার্থীকে ফেল দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ফরম পূরন করতে বাধ্য করা হয়।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়মিত থাকেন না। তিনি সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ব্যক্তিগত কাজে প্রায় স্কুলের বাইরে থাকেন। অভিভাবকরা প্রত্যায়নপত্র বা যে কোনো অফিসিয়াল কাজে আসলে প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়না।

এছাড়াও অভিযোগ আছে,আসন্ন ৫ নং রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এবং সর্বস্তরের জনগণের দোয়া ও সমর্থনে নির্বাচনের জন্য বেশিরভাগ সময় স্কুলের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছিলেন তিনি। যদিও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে এসেছিলেন এই প্রধান শিক্ষক একরামুল হক।

এনটিআরসি এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত এক শিক্ষিকার কাছ থেকে যোগদানের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক একটি ল্যাপটপ অথবা পিকনিকের জন্য টাকা দাবি করেন বলেও জানা গেছে। যদিও ল্যাপটপ চাওয়ার বিষয়টি সেই শিক্ষিকা শিকার করলেও তিনি বলেন আমাকে কোন চাপ দেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন শিক্ষক একসাথে যোগদানের সময় টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন আমাদের স্কুল “কমিটি” চালায়। তাই কমিটিকে কিছু টাকা দিতে হবে খুশি করার জন্য। কিন্ু তারা কথায় কোন টাকা দেয়নি তারা।

এক শিক্ষার্থী বলেন,প্রধান শিক্ষক স্কুলের দশম শ্রেণীতে গণিত ক্লাস নেয়। কিন্তু স্যার নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না। সেইজন্য ক্লাসের ছাত্রদের গণিত রেজাল্ট খুবই খারাপ। এছাড়া কয়েকদিন আগে ১০ম শ্রেণির এক ছাত্র পড়া বুঝতে চাওয়ায় ক্লাসে চুল ধরে অপমান করার ঘটনাও ঘটেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১০ম শ্রেণিতে মাত্র দু’জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন একজন শিক্ষিকা।

শিক্ষার্থীরা জানায়,দূর্নীতি দমন কমিশন থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে “সততা স্টোর” চালু রাখার কথা থাকলেও সেই টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করে ফেলেন। গণমাধ্যমকর্মীরা সততা স্টোর দেখতে চাইলে,শিক্ষকদের চা তৈরির রুমে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকটি মরিচাধরা ব্যবহৃত জ্যামিতি বক্স দেখান স্কুলের একজন কর্মচারী।

অভিযোগে গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের মধ্যে একটি বিদ্যালয়ের ভেন্যু। শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ট্রেনিং এর ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু ভেন্যু বাবদ কোনো টাকা বিদ্যালয়ে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক একাই ভোগ করেন। তাছাড়া ট্রেনিং চলাকালীন সময় প্রায় ১০০/১২৫ জন প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের রান্না করে খাওয়ান। মাঝে মাঝেই স্কুল চলাকালীন সময় শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে পিকনিক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যার কারণে প্রধান শিক্ষক সহ সকল কর্মচারী সেই রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকায় পড়া-লেখার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটে। বর্তমানে আশেপাশের লোকজন তাকে বাবুর্চি হেড মাষ্টার উপাধী দিয়েছে।

অভিযোগগুলো সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক জানান,তিনি নিজের সম্মান রক্ষার্থে আওয়ামী নেতার সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছুই করেছেন। তবে,এতে কারও কোন ক্ষতি করেননি।

বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন অভিভাবক,প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী।