Dhaka 2:00 am, Tuesday, 24 December 2024

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক হাজার কোটি টাকার সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বাড়ছে বাণিজ্যিক চাষাবাদ

বিশ্ব ঐতিহ্য বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারির চাষ।

ইতোমধ্যে নয় উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সুপারির হাট জমে উঠেছে। মোরেলগঞ্জের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আড়ৎ সৈয়দপুরে। ওখান থেকেই স্থানীয় পাইকাররা সুপারি কিনে সরবরাহ করছে উত্তরের ১৬ জেলায়। জানিয়েছেন স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীরা।

বাগেরহাটের নয় উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলায় সুপারির ফলন ভাল হয়। তার মধ্যে মোরেলগঞ্জ উপজেলা অন্যতম। তাই এ উপজেলার ছোট বড় বিভিন্ন হাটকে সামনে রেখে উপজেলার প্রায় ১ হাজার মৌসুম ব্যবসায়ীরা ব্যস্তসময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছরে সুপারির দাম বেশি তাই বেশ খুশি স্থানীয় সুপারি চাষিরা। সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজাওে সুপারির দাম ভালো থাকায় জেলার চাষিরা দিনে দিনে সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছে।বাগেরহাট নারকেল, সুপারি ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এবার এ জেলায় সুপারির ফলনও হয়েছে ভালো। গেল কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সব থেকে বেশি সুপারি হয়েছে। তবে সুপারির বাম্পার ফলন হলেও, হাসি নেই কৃষকের মুখে।

গেল বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সুপারির দাম। যার কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে ইজারা নেওয়া বাগান মালিকদের। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় গৃহস্থ কৃষকেরাও পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুকনো সুপারি আমদানি, হরতাল-অবরোধ ও নিম্নমুখী অর্থনীতির কারণে খুচরো বাজারে সুপারির দাম কমেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় ৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ২৬ হাজার ১২৩ টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকার বেশি। দিনদিন সুপারির চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় উৎপাদিত এসব সুপারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় বড় বাজারে বিক্রি হয়।

 

ব্যবসায়ীরা এই সুপারি ক্রয় করে পাঠান দেশের বিভিন্ন বড় শহরে। রপ্তানিও হয়ে থাকে সামান্য কিছু। অবশিষ্ট সুপারি পানিতে ভিজিয়ে এবং শুকিয়ে অফসিজনে চড়া দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

 

যে-সব বাজারে সব থেকে বেশি সুপারি বিক্রি হয়, তার মধ্যে কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজার অন্যতম। বাধাল বাজারে হাটের দিনে কয়েক কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়। সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার দুই দিন বসে এই হাট। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এই হাটে সুপারি বিক্রি হয় কুড়িতে। এক কুড়ি সমান ২৩১টি সুপারি।

বাধাল বাজারের সুপারির হাটে দেখা যায়, বড় সুপারি প্রতি কুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা গেল বছর ছিল ৭৫০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। মাঝারি সুপারি কুড়ি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট ও কাঁচা সুপারি আকার ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গেল বছরের থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম।

 

মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভাইজোরা গ্রামের চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বছরের ছয় মাসের সংসার খরচ চলে সুপারি বিক্রির টাকায়। কিন্তু এবার দাম এত কম যে তিন মাসের খরচও উঠবে না।

সুপারি বিক্রেতা আনিছ শেখ বলেন, এবার সুপারির দাম অনেক কম। তিন কুড়ি সুপারি নিয়ে এসেছিলাম। ১২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আগের বছরের মতো দাম হলে অন্তত ১৬০০ টাকা বিক্রি করতে পারতাম।

মোরেলগঞ্জের গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি গাছের সুপারি পাড়াতে ১০ টাকা দিতে হয়। এর পরে ভ্যান ভাড়া-বাজারের খাজনা রয়েছে। এত দাম কম হলে আমাদের কি থাকে।

সুপারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, গেল বছরের যে সুপারির কুড়ি ৮০০ টাকা কিনেছি, এবার তার দাম ৪০০ টাকা। যার কারণে সুপারির ফলন বেশি হলেও, কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অনেকটা হতাশ।

 

মোরেলগঞ্জের কালিকাবাড়ি, দৈবজ্ঞহাটি, পোলেরহাট,বাধাল ছাড়াও, কচুয়া, বৈলপুর, মাজারমোড়, সিএন্ডবি বাজারসহ বেশ কিছু হাটে সুপারি বিক্রি হয়। সুপারির কেনাবেচার সঙ্গে বাগেরহাটের ৫ শতাধিক ব্যবসায়ীসহ দশ হাজারের বেশি শ্রমিক জড়িত। সুপারির নতুন বাজার সৃষ্টি হলে, সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট সুপারি চাষের প্রধান জেলা। এবার সুপারির ফলন অনেক ভালো হয়েছে। সুপারির ফল বৃদ্ধির জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে কৃষকরা ভালো দাম পেতে পারে এজন্য নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জরুরি না হলে ও মৌসুমের সময় সুপারির আমদানি বন্ধ রাখলে কৃষকরা ভাল দাম পাবেন বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক হাজার কোটি টাকার সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বাড়ছে বাণিজ্যিক চাষাবাদ

আপলোড সময় : 09:27:51 am, Monday, 21 October 2024

বিশ্ব ঐতিহ্য বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারির চাষ।

ইতোমধ্যে নয় উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সুপারির হাট জমে উঠেছে। মোরেলগঞ্জের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুপারি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আড়ৎ সৈয়দপুরে। ওখান থেকেই স্থানীয় পাইকাররা সুপারি কিনে সরবরাহ করছে উত্তরের ১৬ জেলায়। জানিয়েছেন স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীরা।

বাগেরহাটের নয় উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলায় সুপারির ফলন ভাল হয়। তার মধ্যে মোরেলগঞ্জ উপজেলা অন্যতম। তাই এ উপজেলার ছোট বড় বিভিন্ন হাটকে সামনে রেখে উপজেলার প্রায় ১ হাজার মৌসুম ব্যবসায়ীরা ব্যস্তসময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছরে সুপারির দাম বেশি তাই বেশ খুশি স্থানীয় সুপারি চাষিরা। সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজাওে সুপারির দাম ভালো থাকায় জেলার চাষিরা দিনে দিনে সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছে।বাগেরহাট নারকেল, সুপারি ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এবার এ জেলায় সুপারির ফলনও হয়েছে ভালো। গেল কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সব থেকে বেশি সুপারি হয়েছে। তবে সুপারির বাম্পার ফলন হলেও, হাসি নেই কৃষকের মুখে।

গেল বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সুপারির দাম। যার কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে ইজারা নেওয়া বাগান মালিকদের। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় গৃহস্থ কৃষকেরাও পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুকনো সুপারি আমদানি, হরতাল-অবরোধ ও নিম্নমুখী অর্থনীতির কারণে খুচরো বাজারে সুপারির দাম কমেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় ৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ২৬ হাজার ১২৩ টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকার বেশি। দিনদিন সুপারির চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় উৎপাদিত এসব সুপারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় বড় বাজারে বিক্রি হয়।

 

ব্যবসায়ীরা এই সুপারি ক্রয় করে পাঠান দেশের বিভিন্ন বড় শহরে। রপ্তানিও হয়ে থাকে সামান্য কিছু। অবশিষ্ট সুপারি পানিতে ভিজিয়ে এবং শুকিয়ে অফসিজনে চড়া দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

 

যে-সব বাজারে সব থেকে বেশি সুপারি বিক্রি হয়, তার মধ্যে কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজার অন্যতম। বাধাল বাজারে হাটের দিনে কয়েক কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়। সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার দুই দিন বসে এই হাট। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এই হাটে সুপারি বিক্রি হয় কুড়িতে। এক কুড়ি সমান ২৩১টি সুপারি।

বাধাল বাজারের সুপারির হাটে দেখা যায়, বড় সুপারি প্রতি কুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা গেল বছর ছিল ৭৫০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। মাঝারি সুপারি কুড়ি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট ও কাঁচা সুপারি আকার ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গেল বছরের থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম।

 

মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভাইজোরা গ্রামের চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বছরের ছয় মাসের সংসার খরচ চলে সুপারি বিক্রির টাকায়। কিন্তু এবার দাম এত কম যে তিন মাসের খরচও উঠবে না।

সুপারি বিক্রেতা আনিছ শেখ বলেন, এবার সুপারির দাম অনেক কম। তিন কুড়ি সুপারি নিয়ে এসেছিলাম। ১২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আগের বছরের মতো দাম হলে অন্তত ১৬০০ টাকা বিক্রি করতে পারতাম।

মোরেলগঞ্জের গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি গাছের সুপারি পাড়াতে ১০ টাকা দিতে হয়। এর পরে ভ্যান ভাড়া-বাজারের খাজনা রয়েছে। এত দাম কম হলে আমাদের কি থাকে।

সুপারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, গেল বছরের যে সুপারির কুড়ি ৮০০ টাকা কিনেছি, এবার তার দাম ৪০০ টাকা। যার কারণে সুপারির ফলন বেশি হলেও, কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অনেকটা হতাশ।

 

মোরেলগঞ্জের কালিকাবাড়ি, দৈবজ্ঞহাটি, পোলেরহাট,বাধাল ছাড়াও, কচুয়া, বৈলপুর, মাজারমোড়, সিএন্ডবি বাজারসহ বেশ কিছু হাটে সুপারি বিক্রি হয়। সুপারির কেনাবেচার সঙ্গে বাগেরহাটের ৫ শতাধিক ব্যবসায়ীসহ দশ হাজারের বেশি শ্রমিক জড়িত। সুপারির নতুন বাজার সৃষ্টি হলে, সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট সুপারি চাষের প্রধান জেলা। এবার সুপারির ফলন অনেক ভালো হয়েছে। সুপারির ফল বৃদ্ধির জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে কৃষকরা ভালো দাম পেতে পারে এজন্য নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জরুরি না হলে ও মৌসুমের সময় সুপারির আমদানি বন্ধ রাখলে কৃষকরা ভাল দাম পাবেন বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।