Dhaka 7:21 pm, Monday, 23 December 2024

টিসিবির পণ্য কৌশলে সরিয়ে ফেলার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিককে পেটালেন কাউন্সিলর আরমান

গরীব ও দুস্থদের মাঝে সরকারের বরাদ্দকৃত টিসিবির পণ্য না দিয়ে কৌশলে সরিয়ে ফেলা এবং কার্ডবিহীন ব্যক্তিদের টিসিবির পণ্য প্রদানের তথ্য ও ভিডিও সংগ্রহ করায় দুই সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর,প্রাণনাশের হুমকি ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরমান আলী (৫৬),তার ছেলে আতিকুর রহমান সেতু (৩০) সহ কয়েকজন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।

বোরবার (৩১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর মুক্তিযোদ্ধা রোড এলাকায়। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিতের স্বীকার দুই সাংবাদিকেরা হলেন-দৈনিক বর্তমান পত্রিকার বিভাগীয় প্রধান পাভেল ইসলাম ও দৈনিক এই বাংলা পত্রিকার বিভাগীয় প্রধান জসিম উদ্দিন। গত রোববার (১ এপ্রিল) দিবারাতে এনিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন লাঞ্ছিতের শিকার সাংবাদিক পাভেল ইসলাম মিমুল।

অভিযোগের বরাত দিয়ে সাংবাদিক পাভেল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই খবর পায় যে,কয়েকদিন যাবত কাউন্সিলর আরমান আলী ও তার ছেলে সেতু সরকারি বরাদ্দকৃত টিসিবির পণ্য প্রকৃত সেবাভোগী কার্ডধারী ব্যক্তিদের না দিয়ে নিজের পচ্ছন্দের লোকেদের দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়,তারা টিসিবির মালামাল সিটি কর্পোরেশনের আর্বজনা তোলার ভ্যানগাড়িতে করে পণ্য কৌশলে সরিয়ে ফেলেন।অথচ,রোদেপুড়ে লম্বা লাইন ধরে পণ্য পাবার আশায় দাঁড়িয়ে থাকছেন দীনদুঃখী মানুষেরা। বাস্তবে গিয়েও আমরা এঘটনার সত্যতা পায় এবং এনিয়ে তথ্য ও ভিডিও চিত্র ধারণ করি।

পাভেল ইসলাম আরও বলেন,সেখানে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর আমরা বোয়ালিয়া থানাধীন রামচন্দ্রপুর মুক্তিযোদ্ধা রোডের খোসরুন আরুণ নোমানীর (সাগর) বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই আকস্মিকভাবে পেছন থেকে কাউন্সিলর আরমান,তার ছেলে এবং তাদের সঙ্গে থাকা আরও অজ্ঞাত চার থেকে পাঁচজন গুন্ডবাহিনী আমাদের বেধড়ক কিলঘুষি মেরে যখম করে ও রাস্তায় পড়ে থাকা ইট দিয়ে আমার কানের পাশে আঘাত করে। তবে মাথায় সরিয়ে নেওয়া অল্পের জন্য বেঁচে যায়’।

তারা আমাকে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে গলাচিপে ধরে শ্বাসরোধ করে। এসময় আমার সহকর্মী জসিম উদ্দিন বাঁধা প্রদান করতে গেলে তাকেও বেধড়ক পেটায়। ওই সময় তারা আমাদের দু’জনের কাছে থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সংগ্রহকৃত ভিডিওগুলো জোরপূর্বক আমাদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে লক খুলে তথ্য মুছে ফেলে। এরপর আমার সহকর্মী জসিমের রেডমি নোট-১০ মোবাইল ফোন আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। এমনকি তারা দাম্ভিকতার সঙ্গে বলতে থাকে- ‘তুই আমার এলাকায় আর কোনদিন ঢুকবি না। তোকে আর কোনদিন যেনো আমার এলাকায় না দেখি। আর এ ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সংবাদ প্রকাশ কিংবা থানায় অভিযোগ দিস,তাহলে তোকে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলবো’।

লাঞ্ছিতের স্বীকার আরেক সাংবাদিক জসিমের অভিযোগ, ‘তোদের নিউজে কিচ্ছু হবে না। সাংবাদিকরা সব আমাদের পকেটে। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে বলে- ‘নিউজ করে তোরা আমাদের কিছুই করতে পারবি না’। এখনো তারা আমাদের বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে থানায় মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগসহ হুমকি-ধামকি দিয়েই চলেছে। মামলা করলেই নাকি আমাদের খবর আছে বলে জানান ভুক্তভোগী জসিম ও পাভেল ইসলাম।

ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী খোসরুন আরুণ নোমানী জানান, ‘আমার বাড়ির সামনেই এই ঘটনা। চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি সাংবাদিক পাভেল ইসলাম ও জসিমকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন কাউন্সিলর আরমান,তার ছেলে সেতু ও তাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন। এসব দেখে আমরা কয়েকজন মিলে তাদের থামানোর চেষ্টা করি,কিন্তু ব্যর্থ হই।

এলাকাবাসীরা এসবে ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রবল প্রতিবাদ করলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে ওই দুই যখম সাংবাদিককে আমরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়’।

উল্লেখ্য,২০২২ সালে ১৫ মে রাজশাহীর আলোর ফটোসাংবাদিক ফয়সাল হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে আরমান আলীর বিরুদ্ধে। নিজ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি জায়গায় জমি জবরদখলেরও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বছর পাচেক আগেও এক বৃদ্ধকে টিসিবির পণ্য না দিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটিয়েছেন কাউন্সিলর আরমান। বছর চারেক আগে টিসিবির পণ্য চাওয়ায় এক নারীকে রেজিস্টার খাতা দিয়ে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ২৪ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আরমান আলীকে ফোন দিলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে এব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ন কবীর বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ওই ঘটনার তদন্ত হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা নিব’।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

টিসিবির পণ্য কৌশলে সরিয়ে ফেলার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিককে পেটালেন কাউন্সিলর আরমান

আপলোড সময় : 04:38:10 pm, Monday, 1 April 2024

গরীব ও দুস্থদের মাঝে সরকারের বরাদ্দকৃত টিসিবির পণ্য না দিয়ে কৌশলে সরিয়ে ফেলা এবং কার্ডবিহীন ব্যক্তিদের টিসিবির পণ্য প্রদানের তথ্য ও ভিডিও সংগ্রহ করায় দুই সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর,প্রাণনাশের হুমকি ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক তথ্য মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরমান আলী (৫৬),তার ছেলে আতিকুর রহমান সেতু (৩০) সহ কয়েকজন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।

বোরবার (৩১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর মুক্তিযোদ্ধা রোড এলাকায়। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিতের স্বীকার দুই সাংবাদিকেরা হলেন-দৈনিক বর্তমান পত্রিকার বিভাগীয় প্রধান পাভেল ইসলাম ও দৈনিক এই বাংলা পত্রিকার বিভাগীয় প্রধান জসিম উদ্দিন। গত রোববার (১ এপ্রিল) দিবারাতে এনিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন লাঞ্ছিতের শিকার সাংবাদিক পাভেল ইসলাম মিমুল।

অভিযোগের বরাত দিয়ে সাংবাদিক পাভেল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই খবর পায় যে,কয়েকদিন যাবত কাউন্সিলর আরমান আলী ও তার ছেলে সেতু সরকারি বরাদ্দকৃত টিসিবির পণ্য প্রকৃত সেবাভোগী কার্ডধারী ব্যক্তিদের না দিয়ে নিজের পচ্ছন্দের লোকেদের দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়,তারা টিসিবির মালামাল সিটি কর্পোরেশনের আর্বজনা তোলার ভ্যানগাড়িতে করে পণ্য কৌশলে সরিয়ে ফেলেন।অথচ,রোদেপুড়ে লম্বা লাইন ধরে পণ্য পাবার আশায় দাঁড়িয়ে থাকছেন দীনদুঃখী মানুষেরা। বাস্তবে গিয়েও আমরা এঘটনার সত্যতা পায় এবং এনিয়ে তথ্য ও ভিডিও চিত্র ধারণ করি।

পাভেল ইসলাম আরও বলেন,সেখানে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর আমরা বোয়ালিয়া থানাধীন রামচন্দ্রপুর মুক্তিযোদ্ধা রোডের খোসরুন আরুণ নোমানীর (সাগর) বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই আকস্মিকভাবে পেছন থেকে কাউন্সিলর আরমান,তার ছেলে এবং তাদের সঙ্গে থাকা আরও অজ্ঞাত চার থেকে পাঁচজন গুন্ডবাহিনী আমাদের বেধড়ক কিলঘুষি মেরে যখম করে ও রাস্তায় পড়ে থাকা ইট দিয়ে আমার কানের পাশে আঘাত করে। তবে মাথায় সরিয়ে নেওয়া অল্পের জন্য বেঁচে যায়’।

তারা আমাকে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে গলাচিপে ধরে শ্বাসরোধ করে। এসময় আমার সহকর্মী জসিম উদ্দিন বাঁধা প্রদান করতে গেলে তাকেও বেধড়ক পেটায়। ওই সময় তারা আমাদের দু’জনের কাছে থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সংগ্রহকৃত ভিডিওগুলো জোরপূর্বক আমাদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে লক খুলে তথ্য মুছে ফেলে। এরপর আমার সহকর্মী জসিমের রেডমি নোট-১০ মোবাইল ফোন আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। এমনকি তারা দাম্ভিকতার সঙ্গে বলতে থাকে- ‘তুই আমার এলাকায় আর কোনদিন ঢুকবি না। তোকে আর কোনদিন যেনো আমার এলাকায় না দেখি। আর এ ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সংবাদ প্রকাশ কিংবা থানায় অভিযোগ দিস,তাহলে তোকে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলবো’।

লাঞ্ছিতের স্বীকার আরেক সাংবাদিক জসিমের অভিযোগ, ‘তোদের নিউজে কিচ্ছু হবে না। সাংবাদিকরা সব আমাদের পকেটে। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে বলে- ‘নিউজ করে তোরা আমাদের কিছুই করতে পারবি না’। এখনো তারা আমাদের বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে থানায় মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগসহ হুমকি-ধামকি দিয়েই চলেছে। মামলা করলেই নাকি আমাদের খবর আছে বলে জানান ভুক্তভোগী জসিম ও পাভেল ইসলাম।

ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী খোসরুন আরুণ নোমানী জানান, ‘আমার বাড়ির সামনেই এই ঘটনা। চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি সাংবাদিক পাভেল ইসলাম ও জসিমকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন কাউন্সিলর আরমান,তার ছেলে সেতু ও তাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন। এসব দেখে আমরা কয়েকজন মিলে তাদের থামানোর চেষ্টা করি,কিন্তু ব্যর্থ হই।

এলাকাবাসীরা এসবে ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রবল প্রতিবাদ করলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে ওই দুই যখম সাংবাদিককে আমরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়’।

উল্লেখ্য,২০২২ সালে ১৫ মে রাজশাহীর আলোর ফটোসাংবাদিক ফয়সাল হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে আরমান আলীর বিরুদ্ধে। নিজ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি জায়গায় জমি জবরদখলেরও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বছর পাচেক আগেও এক বৃদ্ধকে টিসিবির পণ্য না দিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটিয়েছেন কাউন্সিলর আরমান। বছর চারেক আগে টিসিবির পণ্য চাওয়ায় এক নারীকে রেজিস্টার খাতা দিয়ে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ২৪ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আরমান আলীকে ফোন দিলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে এব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ন কবীর বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ওই ঘটনার তদন্ত হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা নিব’।