আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশবাসী তাঁদের পক্ষে রয়েছে, কাজেই তাঁর সরকারের পতন ঘটানো এবং দেশকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হবে না।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এই সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্বপ্ন দেখছে।
তারা কিভাবে ভুলে যায় যে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে, যার জন্য জনগণ আওয়ামী লীগকে বারবার ভোট দেয়।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাবে, উত্খাত করবে, নির্বাচন হতে দেবে না, মানুষ খুন করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, এখন তারা কিন্তু কোনো মানুষকে ইফতার দেয় না, নিজেরা ইফতার পার্টি খায়। ইফতার পার্টিতে গিয়েও আল্লাহ রাসুলের নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়। নিজেরা ইফতার খায়, আওয়ামী লীগের গিবত গায়।
আওয়ামী লীগ ইফতার মাহফিল আয়োজন করবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই খাবার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বিলি করছেন।’
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই রমজান মাসে আমি সবাইকে বলব, আপনাদের আশপাশে যারা দরিদ্র সাধারণ মানুষ রয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের সহযোগিতা করুন। আমরা যেমন ইফতার বণ্টন করছি, তাদের সহযোগিতা করছি আপনাদেরও সেটা করতে হবে।
সরকারবিরোধীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা খেয়েদেয়ে মাইক একটা লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উত্খাত করবেন। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? এ দেশ স্বাধীন করেছে, সেটা অপরাধ? আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ায়? দেশটা আজ উন্নত করেছে, সেটাই কি অপরাধ? তারা যে গণতন্ত্রের কথা বলে, আমরা কিন্তু গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি।’
গণতন্ত্র নিয়ে সরকারবিরোধীদের বোঝাপড়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের অর্থ বোঝে? গণতন্ত্র বানান করতে পারে? সেটাই আমার প্রশ্ন। তারা তোতা পাখির মতো বলে যাচ্ছে যে গণতন্ত্রের জন্য নাকি লড়াই করবে। এ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আজ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে বলেই কথা বলতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করায় প্রায় অর্ধশত টেলিভিশন, রেডিও আমাদের হয়ে গেছে। যার যার ইচ্ছামতো টক শো করছে, কথা বলে যাচ্ছে।’
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন এই দাবির পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা কোন সাহসে সেটা চায়, কারণ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারই ছিল। খালেদা জিয়াও সুস্থ ছিলেন, যদিও রাজনীতি করবে না বলে তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে হাওয়া ভবনের খাওয়া খেয়ে লন্ডনে তো তখন তারও রমরমা অবস্থা। কিন্তু সে সময়েও তারা আসন পেয়েছিল ৩০টি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি আসন। এটাও তো তাদের মনে রাখা উচিত। কাজেই কিসের আশায় তারা চায়, বুঝতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশের গরিবের পেটে ভাত থাকে, গরিবের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন যে থাকবে না আমরা সেটারই বাস্তবায়ন ঘটিয়ে যাচ্ছি, আর সেটাই ওদের সহ্য হয় না। সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ ভালো থাকলে সেটা তাদের পছন্দ হয় না। কাজেই তারা যে চায় সেটা ইলেকশনের জন্য নয়, বাংলাদেশকে আবার অন্ধকার যুগে ঠেলে দেওয়ার জন্য। এই দেশকে আর কখনো অন্ধকার যুগে ফেলে দিতে পারবে না। কারণ, এটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন ঠেকাবে, ঠেকাতে পারেনি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। ওদের ভোটের চেহারার কথা তো আমাদের মনে আছে। আমরাও তো সাধারণ মানুষকে ইফতার বিলি করি আর তোমরা ইফতার খাও, তোমরা খেতে জানো, তোমরা হচ্ছ খাই খাই। আর আওয়ামী লীগ দেয়। এটাই হচ্ছে তফাত। আমরা জনগণের সঙ্গে কাজ করি, জনগণের সঙ্গে কাজ করব। আজ জাতির পিতা জন্ম নিয়েছেন বলে বাঙালি জাতি, জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ধন-দৌলত-সম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না। কাজেই এর জন্য মারামারি কাটাকাটি কেন? এগুলোতো ফেলে রেখেই চলে যেতে হয়। কাজেই এগুলো যতটা মানুষকে দিয়ে দেওয়া যায় এবং মানুষের কল্যাণ করা যায় সেটুকুই সঙ্গে থাকে। এটাই সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন, কামরুল ইসলাম ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ।