কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হাফেজ মাওলানা মো: বদরুল হাসান (৪২) নামে মসজিদের এক ইমামের উপর নামাজরত অবস্থায় হামলা চালিয়েছে ক্ষুব্ধ এক মুসল্লী। এ সময় হামলাকারীর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ইমামের পাজরের দুইপাশে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজ চলাকালীন সময়ে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের সাতচর উত্তরপাড়া জামে মসজিদে। পরে মসজিদে উপস্থিত অপর মুসল্লীরা গুরুতর আহত ইমামকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত ইমাম মাওলানা বদরুল হাসান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধিন রয়েছেন। এদিকে স্থানীয়রা রিয়াজুল হক সজীব (২৫) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সে একই ইউনিয়নের সাতচর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের ছেলে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মাগরিবের জামাত শেষে সাতচর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো: বদরুল হাসান সুন্নত নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইমামের উপর আগে থেকে ক্ষুব্ধ সজীব নামে এক মুসল্লী পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমামের শরীরের পেছনে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে রক্তাক্ত অবস্থায় ইমাম হাফেজ মাওলানা মো: বদরুল হাসান মসজিদের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে মসজিদে উপস্থিত অপর মুসল্লীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত ইমাম বদরুল হাসান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার হাসেমদিয়া গ্রামের শামসুল এর ছেলে বলে জানা গেছে। তিনি আলকরা ইউনিয়নের সাতচর রিয়াজুল জান্নাহ মাদরাসার মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করছেন এবং সাতচর উত্তরপাড়া জামে মসজিদে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ইমামতি করছেন।
এদিকে ইমামের উপর হামলার খবর শুনে স্থানীয়রা হামলাকারী যুবক সজীবকে আটক করে রাখে। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স সহ পৌঁছে ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। বুধবার দুপুরে আটককৃত সজীবকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাতচর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি শাহআলম ভূঁইয়া বলেন, ‘হামলার ঘটনা শুনেছি। ইমাম সাহেবের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ন্যাক্কারজনক এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মডেল মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘আলকরায় ইমামের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ‘ইমাম সাহেবের উপর হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণিত কাজ। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তির শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘ইমামের উপর হামলাকারী যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলার কারণ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। এ সংক্রান্তে থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বুধবার দুপুরে আটককৃত যুবককে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’