লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘তরুণসমাজ, যুবসমাজকে এটাই বলব যে কোনো রকম একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে, নিজেকে নিজের চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।’
গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপণ্য (এসএমই) মেলা ২০২৪’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্টার্টআপ প্রগ্রামে আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। আলাদা বাজেট থাকছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আমরা যে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি ছেলেমেয়েদের সেটা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে নারীদের আরো উদ্যোক্তা হতে হবে।’
রপ্তানি বাজারে হস্তশিল্পের চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে হস্তশিল্পের আলাদা কদর আছে, সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
’ পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে, পাশাপাশি দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ বাজার যাতে সৃষ্টি হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় অত্যন্ত ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের পরিবেশ এবং সব কিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত।
শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে। শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবাইকে করতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ এবং নিজের সর্বনাশ করবেন না। আমরা চাই শিল্প গড়ে উঠুক। পাশাপাশি এদিকেও (পরিবেশ) দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। এ জন্য কোনো শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন যেন শিল্পের বর্জ্য নদীতে না পড়ে। আমাদের পানি কোনো রকম দূষিত না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বক্তব্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ফলে বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো আমদানি করতে হয়, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। যার একটা প্রভাব আমাদের দেশে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। এটা শুধু করতে পারব, যখন আমরা নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৩’ বিজয়ী সাতজন মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং স্টার্টআপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ। ২০২৩ সালের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এসএমই উদ্যোক্তাদের পক্ষে ’রংপুর ক্রাফটস’-এর স্বত্বাধিকারী স্বপ্না রানী সেন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত ২০২৪ থেকে ২০২৮ কর্মপরিকল্পনার ওপর রচিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে ‘এসএমই মেলা ২০২৪’-এর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলায় অংশ নেওয়া সাড়ে তিন শর বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এ ছাড়া ৩০টি ব্যাংক, ১৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস ক্লাবসহ আরো প্রায় ৫০টি উদ্যোক্তা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। আগামী ২৫ মে শনিবার পর্যন্ত এই মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।