Dhaka 12:42 am, Tuesday, 24 December 2024

ঘরে বসে সাজা খাটার নতুন আইন হচ্ছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে গত ১৩ মে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। প্রথমবার সাজা ও শিক্ষার্থী বিবেচনায় আদালত তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন ব্যবস্থায় পরিবারের কাছে পাঠান। একজন সমাজসেবা অফিসারের তত্ত্বাবধানে তিথি এখন পরিবারের সঙ্গে আছেন। তাকে তার বৃদ্ধ বাবার নিয়মিত দেখভাল ও সেবাযত্ন করা, শহর এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ আইনবহির্ভূতভাবে রাস্তা পার না হওয়া, সামাজিক নিয়মকানুন, প্রথা, রীতিনীতি প্রভৃতি মেনে চলা, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ না করা, মাদক গ্রহণ না করা, কোনো ধরনের স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, জুয়া, তাস, ক্যাসিনো থেকে দূরে থাকাসহ বেশ কিছু শর্ত মানতে হচ্ছে। এক বছরের প্রবেশন শেষে প্রবেশন কর্মকর্তা যদি তিথির আচরণ সন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন, তবে তার কারাদণ্ড মওকুফ হবে। আর যদি তার আচরণ সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতিবেদন আসে, তবে প্রবেশন বাতিল ও আদালতের দেওয়া দণ্ড তাকে ভোগ করতে হবে।

শুধু তিথি সরকারই নয়, প্রতি মাসে শত শত আসামিকে আদালত কারাগারে না পাঠিয়ে এভাবে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশনে পরিবারের কাছে পাঠাচ্ছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাস পর্যন্ত সারা দেশে প্রবেশনে রয়েছেন ১১ হাজার ১৩৮ আসামি ও শিশু অপরাধী। এসব আসামিকে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স-১৯৬০-এর অধীনে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ৬৪ বছরের পুরোনো এই আইনে রয়েছে নানা ত্রুটি। এ কারণে আইনটি রহিত করে সরকার নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘প্রবেশন (অপরাধী ব্যক্তি এবং দোষী সাব্যস্ত শিশুর সংশোধন ও পুনর্বাসন) আইন-২০২৩’ নামে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বর্তমানে আইনটির খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। খসড়া আইনটি চূড়ান্ত হলে তা মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করা হবে।

জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, প্রবেশন আইন নিয়ে অধিদপ্তরের অংশের কাজ শেষে সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আইন কোষ ও বিধি শাখার একজন সহকারী সচিব কালবেলাকে জানান, আইনটির খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। খসড়া চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে।

খসড়া আইনে যা বলা হয়েছে: খসড়া আইনে ৪৮টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর ৫ ধারায় আদালতকে শর্তাধীন অব্যাহতি, ৬ ও ৭ ধারায় প্রবেশনে প্রেরণ এবং ৮ ধারায় কমিউনিটি সার্ভিস মঞ্জুর করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, যার পূর্বে দণ্ডিত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই এবং যাকে অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে, অথবা কোনো অভিযুক্ত শিশুকে, যার পূর্বে আটকাদেশপ্রাপ্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, এবং যাকে অনূর্ধ্ব তিন বছর মেয়াদে আটক রাখার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে, সেক্ষেত্রে আদালত, অপরাধী ব্যক্তি অথবা দোষী সাব্যস্ত শিশুর বয়স, চরিত্র, প্রাক-পরিচয় অথবা শারীরিক অথবা মানসিক অবস্থা; এবং অপরাধের প্রকৃতি অথবা অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে তার ওপর শাস্তি আরোপ করা যথাযথ না এবং প্রবেশন আদেশ প্রদান করা সমীচীন না মনে করলে, তার কারণ লিপিবদ্ধ করে, যথাযথ সতর্কীকরণ অথবা তিরস্কারের পর তাকে অব্যাহতি প্রদানের আদেশ প্রদান করতে পারবে।

এর ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো পুরুষ দণ্ডবিধির ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়ে বর্ণিত অপরাধগুলো এবং মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অন্যান্য আইনের অধীন অন্যূন সাত বছরের কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ ব্যতীত কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং কোনো নারীকে মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়; এবং কোনো তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়; সেক্ষেত্রে আদালত অপরাধের প্রকৃতি, অপরাধীর চরিত্র ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং অপরাধ সংঘটনে সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে ওই ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক আদেশ প্রদানের পরিবর্তে একটি প্রবেশন আদেশ প্রদান সমীচীন মনে করলে, যথাযথ কারণ লিপিবদ্ধ করে, অথবা ক্ষেত্রমতে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রবেশন অফিসার কর্তৃক দাখিলকৃত প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন বিবেচনাপূর্বক একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে প্রবেশন আদেশ প্রদান করতে পারবেন।’ আদালত প্রবেশনকাল নারী ও পুরুষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অন্যূন এক বছর অথবা অনূর্ধ্ব তিন বছরের জন্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অন্যূন ছয় মাস অথবা অনূর্ধ্ব দুই বছরের জন্য, আদেশে যেরূপ নির্ধারিত হয়, নির্ধারণ করতে পারবেন। এ ধারায় আরও বলা হয়েছে, প্রবেশন আদেশ প্রদানকালে আদালত প্রবেশন অফিসার কর্তৃক অপরাধীর তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেরূপ প্রয়োজন মনে করবে, সেরূপ শর্তাবলি এবং অধিকন্তু অপরাধী কর্তৃক একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি অথবা অন্য কোনো অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধকল্পে এবং তাকে একজন সৎ, পরিশ্রমী ও আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অপরাধীর বাসস্থান, পরিবেশ, মাদকাসক্তি অথবা অন্য কোনো অপরাধ থেকে বিরত রাখা এবং মামলার বিশেষ পরিস্থিতির নিরিখে অন্যান্য বিষয় আদালত যেরূপ উপযুক্ত মনে করবেন, সেরূপ অতিরিক্ত শর্তাদিও মুচলেকায় যুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

আইনের এই ধারায় আরও আছে, প্রবেশন আদেশ প্রদান করা হয়েছে, এমন অবস্থায় আগের একই অপরাধ অথবা অন্য কোনো অপরাধের জন্য ওই প্রবেশনার (যাকে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে) দণ্ডিত হলে প্রবেশন আদেশ অকার্যকর হবে। আদালত প্রবেশন আদেশে প্রবেশনারের উন্নয়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেবেন এবং প্রবেশন অফিসার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রবেশন অফিসার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রবেশনের মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট আদালতে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আদালত, ক্ষেত্রমতে কোনো প্রবেশনারকে ধারা ৮ অনুসারে নির্ধারিত কমিউনিটি সার্ভিসে নিযুক্তির লক্ষ্যে আদেশ প্রদান করতে পারবে।

আইনের ৭ ধারায় বলা আছে, শিশুর প্রবেশন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে শিশু আইন, ২০১৩ এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।

শিশু আদালত শিশুর প্রবেশনকাল অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বছরের জন্য, অথবা আদেশে যেরূপ নির্ধারিত হয়, সেরূপ নির্ধারণ করতে পারবে। আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আদালতের বিবেচনায়, অপরাধী ব্যক্তি অথবা দোষী সাব্যস্ত শিশু দ্বারা সংঘটিত কোনো অপরাধ লঘু প্রকৃতির হলে সেক্ষেত্রে আদালত-অপরাধের প্রকৃতি, ব্যক্তির চরিত্র, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে ওই ব্যক্তি অথবা শিশুকে, তাৎক্ষণিক আদেশ প্রদানের পরিবর্তে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে, কমিউনিটি সার্ভিস আদেশ প্রদান সমীচীন মনে করলে যথাযথ কারণ লিপিবদ্ধ করে অথবা, ক্ষেত্রমত, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রবেশন অফিসার কর্তৃক দাখিলকৃত প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন অথবা শিশুর ক্ষেত্রে সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন বিবেচনাপূর্বক একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে কমিউনিটি সার্ভিস আদেশ প্রদান করতে পারবে।

আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, ৫ ও ৬ ধারার সুযোগ কেউ পেলে সেক্ষেত্রে আদেশ প্রদানকারী আদালত উপযুক্ত মনে করলে অপরাধী ব্যক্তিকে সংঘটিত অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের এবং মামলার খরচ বহনের আদেশ প্রদান করতে পারবে। আইনের ১৮ ধারায় জাতীয় প্রবেশন বোর্ড, ১৯ ধারায় বিভাগীয় প্রবেশন বোর্ড, ২০ ধারায় জেলা প্রবেশন বোর্ড, ২১ ধারায় উপজেলা প্রবেশন বোর্ড, ২২ ধারায় শহর প্রবেশন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রবেশনার উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে এ আইনে।

জানা গেছে, প্রবেশন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্মপদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে ফের অপরাধ করা থেকে বিরত রাখতে ও একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সহায়তা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো অপরাধীর বিচার শেষে অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারাবদ্ধ না রেখে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে বোঝায়। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সঙ্গে সংস্পর্শে আসা শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে অপরাধের দায়ে কারাগারে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবারের সঙ্গে রাখা হয়। সামাজিক পরিবেশে রেখে তার অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একীভূতকরণের সুযোগ দেওয়া হয়। সংশোধনের পুরো এ প্রক্রিয়ার নামই প্রবেশন।

দিন দিন বাড়ছে প্রবেশন:

৬৪ বছরের পুরোনো ওই ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স’-এ আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর সুযোগ থাকলেও পাঁচ বছর আগেও এর তেমন প্রয়োগ ছিল না। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ওই অধ্যাদেশ কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে একটি সার্কুলার জারি করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর থেকে আসামিদের প্রবেশনে পাঠানোর হার বহুগুণে বেড়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবেশনে পাঠানো হয় মাত্র ১৭১ আসামিকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে হয় ২৫৭ জন। আর সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রবেশনের বিধান কার্যকর করতে সার্কুলার জারির পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবেশনে পাঠানো হয় ১ হাজার ১১৪ জনকে। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৪৭ জন এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৫৯ জনকে প্রবেশনে পাঠান আদালত। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৯৫ জনকে প্রবেশনে পাঠিয়েছেন আদালত। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে বর্তমানে সারা দেশে ১১ হাজার ১৩৮ আসামি প্রবেশনে রয়েছে। তবে প্রবেশনে পাঠানো আসামি ও শিশুর সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়লেও প্রবেশন কর্মকর্তা বাড়েনি একজনও। ৬৪টি জেলার জন্য ৬৪ জন এবং ৬টি মহানগর এলাকার জন্য ছয় কর্মকর্তা প্রবেশনে পাঠানো আসামি ও ডাইভারশনে আসা শিশুদের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে প্রবেশনে থাকা বিপুলসংখ্যক আসামি ও শিশুদের তদারকি করতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রবেশন কর্মকর্তাদের।

আইন বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন:

আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রবেশনের ব্যাপারে বলেন, আসামিকে জেলে পাঠানোই ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং তার সংশোধনই হলো মুখ্য। আর এ সংশোধনের অন্যতম উপায় হলো প্রবেশন। আমাদের দেশে পুরোনো একটি আইন থাকলেও, তা দীর্ঘদিন কার্যকর ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের একটি সার্কুলারে এখন কিছুটা কার্যকর করা হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে নতুন আইন করলে তার স্বাগত জানাই। প্রবেশন আইনের কার্যকর করা গেলে বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, প্রবেশনের উদ্দেশ্য হলো, অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা। প্রথমবার অপরাধ করেছে, এমন ব্যক্তি দণ্ডিত হয়ে কারাগারে গেলে বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে আরও বড় অপরাধ সংঘটনের মানসিকতা নিয়ে বের হতে পারে। এ জন্য এ আইন প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া উচিত।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

ঘরে বসে সাজা খাটার নতুন আইন হচ্ছে

আপলোড সময় : 07:30:09 pm, Saturday, 25 May 2024

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে গত ১৩ মে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। প্রথমবার সাজা ও শিক্ষার্থী বিবেচনায় আদালত তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন ব্যবস্থায় পরিবারের কাছে পাঠান। একজন সমাজসেবা অফিসারের তত্ত্বাবধানে তিথি এখন পরিবারের সঙ্গে আছেন। তাকে তার বৃদ্ধ বাবার নিয়মিত দেখভাল ও সেবাযত্ন করা, শহর এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ আইনবহির্ভূতভাবে রাস্তা পার না হওয়া, সামাজিক নিয়মকানুন, প্রথা, রীতিনীতি প্রভৃতি মেনে চলা, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ না করা, মাদক গ্রহণ না করা, কোনো ধরনের স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, জুয়া, তাস, ক্যাসিনো থেকে দূরে থাকাসহ বেশ কিছু শর্ত মানতে হচ্ছে। এক বছরের প্রবেশন শেষে প্রবেশন কর্মকর্তা যদি তিথির আচরণ সন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন, তবে তার কারাদণ্ড মওকুফ হবে। আর যদি তার আচরণ সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতিবেদন আসে, তবে প্রবেশন বাতিল ও আদালতের দেওয়া দণ্ড তাকে ভোগ করতে হবে।

শুধু তিথি সরকারই নয়, প্রতি মাসে শত শত আসামিকে আদালত কারাগারে না পাঠিয়ে এভাবে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশনে পরিবারের কাছে পাঠাচ্ছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাস পর্যন্ত সারা দেশে প্রবেশনে রয়েছেন ১১ হাজার ১৩৮ আসামি ও শিশু অপরাধী। এসব আসামিকে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স-১৯৬০-এর অধীনে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ৬৪ বছরের পুরোনো এই আইনে রয়েছে নানা ত্রুটি। এ কারণে আইনটি রহিত করে সরকার নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘প্রবেশন (অপরাধী ব্যক্তি এবং দোষী সাব্যস্ত শিশুর সংশোধন ও পুনর্বাসন) আইন-২০২৩’ নামে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বর্তমানে আইনটির খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। খসড়া আইনটি চূড়ান্ত হলে তা মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করা হবে।

জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, প্রবেশন আইন নিয়ে অধিদপ্তরের অংশের কাজ শেষে সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আইন কোষ ও বিধি শাখার একজন সহকারী সচিব কালবেলাকে জানান, আইনটির খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। খসড়া চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে।

খসড়া আইনে যা বলা হয়েছে: খসড়া আইনে ৪৮টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর ৫ ধারায় আদালতকে শর্তাধীন অব্যাহতি, ৬ ও ৭ ধারায় প্রবেশনে প্রেরণ এবং ৮ ধারায় কমিউনিটি সার্ভিস মঞ্জুর করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, যার পূর্বে দণ্ডিত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই এবং যাকে অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে, অথবা কোনো অভিযুক্ত শিশুকে, যার পূর্বে আটকাদেশপ্রাপ্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, এবং যাকে অনূর্ধ্ব তিন বছর মেয়াদে আটক রাখার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে, সেক্ষেত্রে আদালত, অপরাধী ব্যক্তি অথবা দোষী সাব্যস্ত শিশুর বয়স, চরিত্র, প্রাক-পরিচয় অথবা শারীরিক অথবা মানসিক অবস্থা; এবং অপরাধের প্রকৃতি অথবা অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে তার ওপর শাস্তি আরোপ করা যথাযথ না এবং প্রবেশন আদেশ প্রদান করা সমীচীন না মনে করলে, তার কারণ লিপিবদ্ধ করে, যথাযথ সতর্কীকরণ অথবা তিরস্কারের পর তাকে অব্যাহতি প্রদানের আদেশ প্রদান করতে পারবে।

এর ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো পুরুষ দণ্ডবিধির ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়ে বর্ণিত অপরাধগুলো এবং মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অন্যান্য আইনের অধীন অন্যূন সাত বছরের কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ ব্যতীত কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং কোনো নারীকে মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়; এবং কোনো তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়; সেক্ষেত্রে আদালত অপরাধের প্রকৃতি, অপরাধীর চরিত্র ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং অপরাধ সংঘটনে সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে ওই ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক আদেশ প্রদানের পরিবর্তে একটি প্রবেশন আদেশ প্রদান সমীচীন মনে করলে, যথাযথ কারণ লিপিবদ্ধ করে, অথবা ক্ষেত্রমতে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রবেশন অফিসার কর্তৃক দাখিলকৃত প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন বিবেচনাপূর্বক একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে প্রবেশন আদেশ প্রদান করতে পারবেন।’ আদালত প্রবেশনকাল নারী ও পুরুষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অন্যূন এক বছর অথবা অনূর্ধ্ব তিন বছরের জন্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অন্যূন ছয় মাস অথবা অনূর্ধ্ব দুই বছরের জন্য, আদেশে যেরূপ নির্ধারিত হয়, নির্ধারণ করতে পারবেন। এ ধারায় আরও বলা হয়েছে, প্রবেশন আদেশ প্রদানকালে আদালত প্রবেশন অফিসার কর্তৃক অপরাধীর তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেরূপ প্রয়োজন মনে করবে, সেরূপ শর্তাবলি এবং অধিকন্তু অপরাধী কর্তৃক একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি অথবা অন্য কোনো অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধকল্পে এবং তাকে একজন সৎ, পরিশ্রমী ও আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অপরাধীর বাসস্থান, পরিবেশ, মাদকাসক্তি অথবা অন্য কোনো অপরাধ থেকে বিরত রাখা এবং মামলার বিশেষ পরিস্থিতির নিরিখে অন্যান্য বিষয় আদালত যেরূপ উপযুক্ত মনে করবেন, সেরূপ অতিরিক্ত শর্তাদিও মুচলেকায় যুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

আইনের এই ধারায় আরও আছে, প্রবেশন আদেশ প্রদান করা হয়েছে, এমন অবস্থায় আগের একই অপরাধ অথবা অন্য কোনো অপরাধের জন্য ওই প্রবেশনার (যাকে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে) দণ্ডিত হলে প্রবেশন আদেশ অকার্যকর হবে। আদালত প্রবেশন আদেশে প্রবেশনারের উন্নয়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেবেন এবং প্রবেশন অফিসার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রবেশন অফিসার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রবেশনের মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট আদালতে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আদালত, ক্ষেত্রমতে কোনো প্রবেশনারকে ধারা ৮ অনুসারে নির্ধারিত কমিউনিটি সার্ভিসে নিযুক্তির লক্ষ্যে আদেশ প্রদান করতে পারবে।

আইনের ৭ ধারায় বলা আছে, শিশুর প্রবেশন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে শিশু আইন, ২০১৩ এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।

শিশু আদালত শিশুর প্রবেশনকাল অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বছরের জন্য, অথবা আদেশে যেরূপ নির্ধারিত হয়, সেরূপ নির্ধারণ করতে পারবে। আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আদালতের বিবেচনায়, অপরাধী ব্যক্তি অথবা দোষী সাব্যস্ত শিশু দ্বারা সংঘটিত কোনো অপরাধ লঘু প্রকৃতির হলে সেক্ষেত্রে আদালত-অপরাধের প্রকৃতি, ব্যক্তির চরিত্র, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে ওই ব্যক্তি অথবা শিশুকে, তাৎক্ষণিক আদেশ প্রদানের পরিবর্তে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে, কমিউনিটি সার্ভিস আদেশ প্রদান সমীচীন মনে করলে যথাযথ কারণ লিপিবদ্ধ করে অথবা, ক্ষেত্রমত, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রবেশন অফিসার কর্তৃক দাখিলকৃত প্রাক-দণ্ডাদেশ প্রতিবেদন অথবা শিশুর ক্ষেত্রে সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন বিবেচনাপূর্বক একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে কমিউনিটি সার্ভিস আদেশ প্রদান করতে পারবে।

আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, ৫ ও ৬ ধারার সুযোগ কেউ পেলে সেক্ষেত্রে আদেশ প্রদানকারী আদালত উপযুক্ত মনে করলে অপরাধী ব্যক্তিকে সংঘটিত অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের এবং মামলার খরচ বহনের আদেশ প্রদান করতে পারবে। আইনের ১৮ ধারায় জাতীয় প্রবেশন বোর্ড, ১৯ ধারায় বিভাগীয় প্রবেশন বোর্ড, ২০ ধারায় জেলা প্রবেশন বোর্ড, ২১ ধারায় উপজেলা প্রবেশন বোর্ড, ২২ ধারায় শহর প্রবেশন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রবেশনার উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে এ আইনে।

জানা গেছে, প্রবেশন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্মপদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে ফের অপরাধ করা থেকে বিরত রাখতে ও একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সহায়তা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো অপরাধীর বিচার শেষে অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারাবদ্ধ না রেখে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে বোঝায়। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সঙ্গে সংস্পর্শে আসা শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে অপরাধের দায়ে কারাগারে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবারের সঙ্গে রাখা হয়। সামাজিক পরিবেশে রেখে তার অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একীভূতকরণের সুযোগ দেওয়া হয়। সংশোধনের পুরো এ প্রক্রিয়ার নামই প্রবেশন।

দিন দিন বাড়ছে প্রবেশন:

৬৪ বছরের পুরোনো ওই ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স’-এ আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর সুযোগ থাকলেও পাঁচ বছর আগেও এর তেমন প্রয়োগ ছিল না। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ওই অধ্যাদেশ কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে একটি সার্কুলার জারি করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর থেকে আসামিদের প্রবেশনে পাঠানোর হার বহুগুণে বেড়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবেশনে পাঠানো হয় মাত্র ১৭১ আসামিকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে হয় ২৫৭ জন। আর সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রবেশনের বিধান কার্যকর করতে সার্কুলার জারির পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবেশনে পাঠানো হয় ১ হাজার ১১৪ জনকে। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৪৭ জন এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৫৯ জনকে প্রবেশনে পাঠান আদালত। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৯৫ জনকে প্রবেশনে পাঠিয়েছেন আদালত। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে বর্তমানে সারা দেশে ১১ হাজার ১৩৮ আসামি প্রবেশনে রয়েছে। তবে প্রবেশনে পাঠানো আসামি ও শিশুর সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়লেও প্রবেশন কর্মকর্তা বাড়েনি একজনও। ৬৪টি জেলার জন্য ৬৪ জন এবং ৬টি মহানগর এলাকার জন্য ছয় কর্মকর্তা প্রবেশনে পাঠানো আসামি ও ডাইভারশনে আসা শিশুদের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে প্রবেশনে থাকা বিপুলসংখ্যক আসামি ও শিশুদের তদারকি করতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রবেশন কর্মকর্তাদের।

আইন বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন:

আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রবেশনের ব্যাপারে বলেন, আসামিকে জেলে পাঠানোই ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং তার সংশোধনই হলো মুখ্য। আর এ সংশোধনের অন্যতম উপায় হলো প্রবেশন। আমাদের দেশে পুরোনো একটি আইন থাকলেও, তা দীর্ঘদিন কার্যকর ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের একটি সার্কুলারে এখন কিছুটা কার্যকর করা হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে নতুন আইন করলে তার স্বাগত জানাই। প্রবেশন আইনের কার্যকর করা গেলে বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, প্রবেশনের উদ্দেশ্য হলো, অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা। প্রথমবার অপরাধ করেছে, এমন ব্যক্তি দণ্ডিত হয়ে কারাগারে গেলে বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে আরও বড় অপরাধ সংঘটনের মানসিকতা নিয়ে বের হতে পারে। এ জন্য এ আইন প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া উচিত।