মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় ঋণ পরিশোধে সরকারের চাপ বাড়ছে। এতে ভর্তুকি ও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। টাকার মান কমায় রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা সীমিতভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ভোক্তারা। ক্রয়ক্ষমতা কমছে তাদের, বাড়ছে পণ্যের দাম। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমকি ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর আগে বাজেট তৈরির কাজ করছে অর্থ বিভাগ।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে শিল্প ও কৃষি প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এ প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি। এ ছাড়া এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেওয়া ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাংকের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের বেশ কাছাকাছি।
জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রাথমিকভাবে সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছিল, যা পরে সংশোধন করে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে তা অর্জন সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাজেট তৈরি করা হচ্ছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বিবিএসের অস্থায়ী জিডিপি প্রাক্কলনের কারণে গত মঙ্গলবার অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিবিএসের প্রতিবেদনে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হলেও আগামী অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে থাকবে।
অর্থ বিভাগ মনে করে চলতি অর্থবছরে শিল্প ও কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি মন্থর হলেও পরের বছর এসব খাত ভালো করবে। এ ছাড়া পরিসেবা খাত আরও ভালো করবে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণে সবাই একমত হয়েছেন।
তবে অর্থনীতি স্বাভাবিক না হলে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ অর্জন করতে চাইলে অর্থনীতি আপ টেন্ডে যেতে হবে। ডলারের রেট স্টেবল হতে হবে। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে আসতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এতগুলো সূচক অর্জন করা সহজ নয়। ফলে আগামী অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন।
এদিকে ডলারের হিসেবে মাথাপিছু আয় কমে যাওয়ায় আগামী বাজেট বক্তৃতার সারণীতে মাথাপিছু আয় ডলারে দেখাতে চায় না সরকার। তবে এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সরকার জনগণের সামনে মাথাপিছু আয় কম দেখাতে চাচ্ছে না। তাই ডলারের বিষয়টি আড়াল করতে চাচ্ছে। তবে যেহেতু টাকায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে, তাই জনগণের সামনে টাকায় দেখাতে চায় সরকার।